Monday, September 6, 2010

পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি জাতীয়তাবাদ



"Nationalism", remarks an African character in Raymond Williams's novel Second Generation (London, 1964), "is in this sense like class. To have it, and to feel it, is the only way to end it. If you fail to claim it, or give it up too soon, you will merely be cheated, by other classes nd other nations." Nationalism, like class, would thus seem to involve an impossible irony. It is sometimes forgotten that social class, for Karl Marx at least, is itself a form of alienation, canceling the particularity of an individual life into collective anonymity. Where Marx differs from the commonplace liberal view of such matters is in his belief that to undo this alienation you had to go, not around class, but somehow all the way through it and out the other side. To wish class or nation away, to seek to live sheer irreducible difference now in the manner of some contemporary post-structuralist theory, is to play straight into the hands of the oppressor.

Terry Eagleton 'Nationalism: Irony and Commitment' (from 'Nationalism, Colonialism and Literature')



এক


যে প্রধানতম কারণগুলি পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালিদের পরিচয়-সঙ্কট সৃষ্টি করেছে, তার মধ্যে ভালগার
মার্ক্সবাদি চিন্তাধারা অন্যতম, আর চিত্তাকর্ষকভাবে এর সঙ্গে সুন্দর তান ধরেছে বুর্জোয়া উদারনীতি। সংক্ষেপে বললে একদিক থেকে বামপন্থি, অন্যদিক থেকে দক্ষিণপন্থি, এই দুই সাঁড়াশি আক্রমণে বাঙালি জাতীয়তাবাদ বহুদিন থেকেই পশ্চিমবঙ্গে কোনঠাসা। কিন্তু সমস্যা সেখানেই শেষ হয় না, এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের কোনঠাসা হওয়ার কারণ অনেকগুলি।

একসময় হাওড়া স্টেশনে দেওয়াললেখন দেখা গিয়েছিল, আশি শতাংশ বাঙালির চাকরি চাই। আমরা বাঙালি (পশ্চিমবঙ্গে এই নামে একটি অতিক্ষুদ্র, তীব্র দক্ষিণপন্থি, আনন্দমার্গি প্রভাবিত মৌলবাদি সংগঠন আছে)। কিছুদিন পরে দেখা গেল, কোনও রসিকজন নিচে ছোট্ট করে লিখে দিয়েছেন, বাকি কুড়ি শতাংশ কি হাত মারিবে? আমরাও বাঙালি। এরপর বিষম খেয়ে আমরা বাঙালি অবশ্য পুরো একশো শতাংশ বাঙালির চাকরি দাবি করা শুরু করে দেয়! এ থেকে আমাদের আরেকটি ট্র্যাজেডি সামনে আসে। চাকুরিপ্রিয়, বঙ্কিম বলেছিলেন।

বাঙালিয়ানার আরও একটি সমস্যা এখানে দৃশ্যমান। উচ্চবর্গ এই ডিসকোর্সকে কখনও প্রাধান্য দেননি, ফলে বাঙালিয়ানা কি, সেটা নিয়ে কি করব, আদৌ সেটা খায় না মাথায় দেয় তা নিয়ে শিক্ষিত মহলে তীব্র বিভ্রান্তি ছিল। এবং যে অল্পশিক্ষিত মানুষেরা সম্পূর্ণ দিশাহীনভাবে খুঁজে যাচ্ছিলেন নিজের পরিচয়, তাকে লালন ও রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন, তাঁরা বিদ্রূপের পাত্র হিসেবে পরিচিত হন।

আমার জন্মের পর বাঙালিয়ানা শব্দটি ব্যবহৃত হতেই খুব কম দেখেছি। ১৯৯৯ সাল নাগাদ প্রথম এই বাঙালিয়ানা শব্দটি হঠাৎ আজকাল বলে একটি বাংলা কাগজ ব্যবহার করা শুরু করে। আজকাল বরাবরই সিপিএম এর ভেতরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য গোষ্ঠীর মুখপত্র ছিল, কিন্তু নব্বই এর দশকে অনেক সিপিএম বিরোধী, গণতন্ত্রী ও বিকল্প বামপন্থায় বিশ্বাসি মানুষ এই কাগজটি পড়তেন। তখনও আজকাল এমন সিপিএম এর ধামাধরা হয়ে যায়নি। অনেকে আজ আর বিশ্বাস করবেন না, একসময় আজকাল মমতা ব্যানার্জিকে অনেক বেশি কভারেজ দিত এবং গণতন্ত্র রক্ষায় তার লড়াইয়ের সমর্থক ছিল। কবীর সুমনের (তখন সুমন চট্টোপাধ্যায়) আত্মজীবনী 'হয়ে ওঠা গান' প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল শারদীয়া আজকালে।

সেসময় কলকাতার ক্রিকেট জ়ার জগমোহন ডালমিয়া ছিলেন জ্যোতি বসু ও সুভাষ চক্রবর্তির ঘনিষ্ঠ। এদিকে বুদ্ধদেব গোষ্ঠী তখন থেকেই তাকে সরাতে চাইছিল (এই সঙ্ঘর্ষ ২০০৬-৭ এ আবার মাথাচাড়া দেবে)। ১৯৯৯ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারির ঠিক আগে আজকাল সম্পাদক অশোক দাশগুপ্ত কিছু লেখা লিখতে শুরু করেন, কলকাতায় বাঙালির অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদাত্ত ডাক দিয়ে (মূল উদ্দেশ্য ছিল মাড়োয়ারি ডালমিয়াকে সরানো)। বাঙালিয়ানা বলে একটা শব্দ বহুল ব্যবহৃত হতে শুরু করে। মূলত আজকালের উদ্যোগে নবজাগরণ নামে একটা সংগঠন শুরু হয়, তাতে সুনীল গাঙ্গুলিও জড়িত ছিলেন। সুনীল সেই সময় আনন্দবাজার কাগজে একটার পর একটা উত্তর-সম্পাদকীয় লেখেন, একটি প্রধান দাবি ছিল কলকাতায় সমস্ত সাইনবোর্ডে বাংলা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সুনীল কানাডার ফরাসীভাষি কুইবেক প্রদেশের উদাহরণ দিয়ে বলেন যে সেখানে যেমন ফরাসি ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার জন্য ভাষা পুলিস তৈরি হয়েছে, কলকাতায় তাই করতে হবে (সুনীলকে এ জন্য করসেবক এবং শিবসেনা বলে গাল দিয়েছিলেন একজন মাইনর লেখিকা অনিতা অগ্নিহোত্রি, যিনি আনন্দবাজারের খুব প্রিয়পাত্র ছিলেন, এখনও আছেন কিনা জানিনা)। তা যদিও হয়নি, কিন্তু এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে তারা কিছু অভিযান করেন, কলকাতা পুরসভা এরপরে এই মর্মে আইন তৈরি করেন। আজ ধর্মতলা অঞ্চলে সমস্ত দোকানের সাইনবোর্ডে আপনি বাংলা দেখতে পাবেন, ছোট করে এককোনায় লেখা থাকে অবশ্য, তবু তো থাকে। এখনকার প্রজন্মের জানা উচিত যে আমাদের ছোটবেলায় আমরা কিন্তু কলকাতার কেন্দ্রস্থলে বাংলা লেখা খুঁজেই পেতাম না। এই সময় আরো একটি দাবি সামনে আসেঃ পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত স্কুলে (যে বোর্ডেরই হোক না কেন) বাংলা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সেটা এখনও হয়নি।

এই সময়েই ক্যালকাটা নাম পালটে দিয়ে করা হয় কলকাতা। বিধানসভায় সর্বসম্মত প্রস্তাব নেওয়া হয়, ওয়েস্ট বেঙ্গল থেকে রাজ্যের নাম হবে বাংলা। যদিও তা আর কেন্দ্রের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় নি (ভারতে রাজ্যের নাম পালটাতে গেলে কেন্দ্রের অনুমোদন লাগে), এবং সেটি এখন হিমঘরে চলে গেছে। কিন্তু ইতিহাস পালটানো যায় না। বাঙালি বিধায়করা চেয়েছিলেন এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা প্রস্তাব পাশ করেছিল, এটা ইতিহাসে থেকে যাবে, এবং আমাদের এ ব্যাখ্যাও খুঁজতে হবে যে কেন শেষ পর্যন্ত এই বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে গেল।

বাংলায় লেখা গ্রিটিংস কার্ড এই সময়ে বাজারে আসতে শুরু করে। বাংলা ব্যান্ডের জয়যাত্রা এইসময় শুরু হয়। অল্পবয়সিরা বাংলা গান শুনতে শুরু করেছিলেন নচিকেতা, অঞ্জন দত্ত, শিলাজিৎদের সময় থেকেই, নব্বই দশকের প্রথমভাগে। সুমনকে নিয়ে একশ্রেণির গুরুঠাকুর-গুরুজনেরা এমন গম্ভীর আচরণ দেখাতে থাকেন, এবং মাধ্যমিক পরীক্ষার টেস্টে (হিন্দু স্কুলে) সুমনের গান (সূর্য বলল ইস) ভাবসম্প্রসারণে চলে আসে, ফলে আমরা যারা কিশোরবয়সী ছিলাম, কিছুটা ভেবড়ে যাই। সেইবয়সে সুমনের প্রতি কিছুটা বীতরাগ চলে আসে, কারন মনে হচ্ছিল সুমন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। এত ভারি কথা নিশ্চয়ই মনে হয়নি, স্রেফ ভেবেছিলাম যে সুমনের বাংলা ভাষা বড় বেশি সিলেবাস-গন্ধী।

আমরা যাদের প্রথম মানবজীবন স্মৃতির উন্মোচন হচ্ছে আশির দশকের শেষভাগে, আমরা জানি তখন বাংলা সংস্কৃতির কি দারুন বন্ধ্যাদশা চলছে। ৮৬ সালের হোপ এইট্টি সিক্স, যেখানে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে জ্যোতিবাবু সুভাষের পাশে বসে বলিউডি নাচগান দেখেছিলেন, তার থেকে একটা নার্সারি ননসেন্স রাইম শুরু হয়, 'শ্রীদেবীর কোলে/জ্যোতিবাবু দোলে'। তখন আমি প্রাথমিক স্কুলে। হেমন্ত মারা যান ৮৮ কি ৮৯ সালে (ঠিক মনে নেই), তখন কাগজে লেখা হয়েছিল, হেমন্ত মরে গিয়েও বাঙালি জাতিকে ঋণী করে গেলেন, নয়ত এবছর পুজোপ্যান্ডেলে হাওয়া হাওয়া আর ওয়ে ওয়ের যুগলবন্দী বাঙালির কানের দফারফা করে দিত (তখনকার দুটি ব্যাপক হিট বলিউডি গান)। বলা বাহুল্য যে সেবছর সব প্যান্ডেলের লাউডস্পিকার শুধুই হেমন্তময় থেকেছিল। এই উষর জমিতে সুমন বর্ষা হয়ে নেমেছিলেন, সেকথা আজ বোঝা যায়। বাংলা সিনেমায় যে কাজ করেছিলেন সত্যজিত, বাংলা কবিতায় যে কাজ করেছিলেন জীবনানন্দ, বাংলা গানে সেই কাজ করেছেন সুমন। তিনি ভগীরথ। আধুনিক বাংলা কবিতা ও আধুনিক বাংলা গানের মধ্যে যে বিশাল দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছিল, তিনি তা ঘোচালেন। সুমনের থেকেই আমাদের পালটে যাওয়ার সময় হিসেব করতে হবে। অনেকে বলেন বাংলায় আরেকটা রেনেসাঁস হতে চলেছে। জানিনা। যদি হয়, তার শুরু সুমন।

কেন এই পরিবর্তন হয় গত কুড়ি বছরে (সুমনের তোমাকে চাই প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯১ সালে), তার পেছনে অনেকগুলি কারন নিহিত আছে। যদি বাঙালি জাতীয়তাবাদ বা বাঙালিয়ানা ব্যাপারটাকে বুঝতে চাই, আমাদের যাকে বলে স্টক-টেকিং করা দরকার। কিন্তু প্রদীপ জ্বালানোর আগে সলতে পাকা্তে হবে।

শুরুটা করা যাক বাঙালি জাতির শুরু থেকে। পাল আমলে আমাদের উৎস, মোটামুটি সবাই একমত হবেন। এর আগে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা আমাদেরই পূর্বপুরুষ, তবে ঠিক বাংলা ভাষা বলতে যা বুঝি তা ছিল না। বাংলায় তখন বৌদ্ধ ধর্ম। পূর্ববঙ্গে যারা নাবিকের কাজ করতেন, তাদের একটা বড় অংশ নবম দশম শতাব্দিতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন, কারণ ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরের বাণিজ্য তখন ইসলামের নিয়ন্ত্রণে। এদিকে বাকি ভারতে তখন সনাতন ধর্মের পুনরুত্থান হচ্ছে। এমন সময় বাংলায় কর্নাটক থেকে আসা গোঁড়া সনাতনধর্মী সেনরা রাজা হলেন, এবং যা করে গেলেন, তার সুদুরপ্রসারি ফল থেকে গেল। এরা বাংলায় হিন্দুধর্ম আনলেন। আসলে এই হিন্দু কথাটা তো মুসলিমরা ভারতে আসার আগে ব্যবহৃত হয়নি, এই ধর্মের পরিচয় ছিল সনাতন ধর্ম বা ব্রাহ্মণ্য ধর্ম। সেই সনাতনধর্ম প্রথমবারের জন্য বাংলায় জাঁকিয়ে বসল। এর আগে গৌড়ের প্রথম স্বাধীন রাজা বলে যিনি পরিচিত, শশাঙ্ক (নিজেই ব্রাহ্মণ ছিলেন, ইতিহাস বলে), তিনিও চেষ্টা করেছিলেন বাংলায় সনাতনধর্ম প্রচলনের, এবং বলা হয়, বাংলায় প্রথম ব্রাহ্মণ তিনিই আনিয়েছিলেন উত্তরভারত থেকে। কিংবদন্তি এই যে গয়ার বোধিবৃক্ষ উপড়ে ফেলার পাপে শশাঙ্ক দুরারোগ্য কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হন, এবং তখন এই ব্রাহ্মণদের আনা হল যাগ-যজ্ঞ করার জন্য। আরো একটা কি কারণে যেন এইসময় পূর্ব ভারতে বেশ কিছু ব্রাহ্মণ চলে আসেন আর্যাবর্ত্ম থেকে, সেটা আমার ঠিক মনে নেই।
এর অনেকপরে যখন সেনরা কনৌজ থেকে পাঁচজন ব্রাহ্মণ আনলেন, তারা এসে দেখেন যে সেই শশাঙ্ক আনিত ব্রাহ্মণরা বেশ গোকুলে বেড়ে এখন সংখ্যায় সাতশ। তবে তাদের আর বিন্দুমাত্র বামনাই নেই, বাংলায় এসে একদম প্রাকৃতজন হয়ে গেছেন। এদের সপ্তশতী বলা হয়।
সেন আমলে বাংলায় প্রথমবারের জন্য সনাতন ধর্ম আসে। বর্ণভেদও এল। বৌদ্ধরা জাতিপ্রথা মানতেন না, বাংলায় মূলত পেশা-ভিত্তিক অনেকগুলি শ্রেণী ছিল। এবার তাদের সঙ্করবর্ণ হিসেবে ব্যাখ্যা করে শূদ্রত্বের বিভিন্ন ধাপে বিন্যস্ত করা হয়।

মনে রাখতে হবে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ একটি আধুনিক চিন্তা। এই ইমাজিন্ড কমিউনিটি কয়েকটি বিশেষ আর্থ সামাজিক কারণ ছাড়া গড়ে ওঠে না। কাজেই সেন আমলে যখন বাঙালিরা ভেঙেচুরে যাচ্ছেন, তখন তাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিলই না, যে এর ফলে তাদের জাতি হিসেবে আগামি হাজার বছরের জন্য মেরুদণ্ড ভাঙা হল। আজ অনেকে একদেশদর্শীভাবে এর জন্য শুধু বিজাতীয় সেনবংশকে দায়ী করেন। ওরা অবাঙালি ছিলেন, কিন্তু শুধু সেটাই আমাদের দুর্দশার কারণ নয়। শশাঙ্ক তো বাংলারই সামন্তরাজা, অর্থাৎ বাঙালিই ছিলেন বলা যায়, কিন্তু তিনিও তো চেষ্টা করলেন সনাতনধর্মের প্রচলনের। গোটা ভারতে যখন বৌদ্ধধর্মের কণ্ঠরোধ হচ্ছে, সনাতনধর্মের জয়পতাকা উড়ছে, শঙ্করাচার্য ব্রাহ্মণ্যধর্মকে প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেই আবহে বাংলায় অন্যকিছু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল কি? বিশেষত আমাদের বাণিজ্যের অবস্থা তখন খুবই করুণ, পাল আমলের মুদ্রা দেখলেই বোঝা যায়। সেনরা তো স্রেফ কড়ি দিয়ে কাজ চালিয়ে দিলেন। বাংলার ও গোটা ভারতের বৌদ্ধদের সবথেকে বড় শক্তি ছিল শ্রেষ্ঠিদের সমর্থন, একটা আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। সেই শ্রেণিটি দুর্বল হয়ে পড়ছেন, কারণ ইসলামের হাতে সাগর বাণিজ্য এবং পুরো পশ্চিম এশিয়া চলে গেছে। এমন অবস্থায় রাজাদের বয়ে গেছে বৌদ্ধদের প্রতি বিশেষ পক্ষপাত দেখাতে। আর বাংলার যা আর্থিক দুরবস্থা ছিল, তাতে এখানে সনাতনধর্মের পুনরুত্থান থেকে স্বতন্ত্র কিছু হওয়া সম্ভব ছিল বলে মনে হয় না। যে কারণে বৌদ্ধধর্মের পতন হল, সেই কারণেই কিন্তু খুব শিগগিরি ভারতেও ইসলামের পত্তন হবে এবং ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় দের হাত থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা বেরিয়ে যাবে। ইতিহাসের আয়রনি। ওরা যখন মহাউৎসাহে সনাতনধর্মের প্রচলন করছেন, ও বৌদ্ধধর্মের উচ্ছেদ করছেন, ওরা জানতেন না, এই ক্ষমতা বেশিদিন টিকবে না। কিন্তু এই অল্পসময়টায় ওরা যা করে গেলেন, তা ভয়ানক। বাংলায় ছত্রিশ জাতের সম্মিলনে এক হায়ারার্কি শুরু হল, যা মোটেই ইয়ার্কি নয়।
কৃষি নাকি আমাদের ভিত্তি, আর শিল্প ভবিষ্যত। অন্তত উন্নততর বামফ্রন্টের তাই বক্তব্য। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি আর ভবিষ্যত কি কে জানে!

No comments: