এমন বসন্ত দিনে...বাড়ি ফের মাংস কিনে...
এই সব বসন্ত সন্ধ্যায় পূর্বস্মৃতি ফিরে আসে, আর তুমিও আমার কাছে ফেরার চেষ্টা করেছিলে, যখন মনে হয়েছিল সম্পূর্ণ মানুষজন্ম কেটে যাবে শুধু অতীতকথনে, আর আঙুল ছুঁইয়ে পারমিতা কেটে পড়ল অথচ ঘড়িতে মোটে সাড়ে ছটা, আমি সেরকম সন্ধ্যার শপথ নিয়ে বলছি, বইমেলা ময়দান থেকে সরে যাবার দুঃখ আমরা এখনও দুই ভুরুর মাঝে জমিয়ে রাখি, আর খুব সম্ভবত আমি এই জবানবন্দি শেষ হওয়ার আগেই কলকাতা ছেড়ে চলে যাব, তাই বলে তুমি উড়ালপুল দিয়ে ভিক্টোরিয়া থেকে পার্ক সার্কাসে যাওয়ার সময় ক্যামাক স্ট্রিটের দিকে অপাঙ্গে তাকানো বন্ধ কোরো না, কারণ ওখানে ভিন্ন ডাইমেনশনে আমাদের দু একটি প্রতিচ্ছবি এখনও উত্তর অভিমুখে হেঁটে চলেছে, যেমন দুহাজার এক সালে আমরা হেঁটে চলতাম, আমি আর আমার পুরুষবন্ধু অভিজিত, সমান্তরালে সেই লক্ষ্যহীন এক্সাইড যেখানে আমার পূর্বপুরুষরা একটি সওদাগরি আপিসে বংশপরম্পরায় চাকরি করতেন, এও বলা দরকার যে হাজরা থেকে লেক মার্কেট পর্যন্ত পায়েলের হাত ধরে হাঁটতে গেলে তখন কোনও প্যারোলের আবেদন করতে হত না, আজ যেরকম প্রবাস থেকে ফিরতে গেলে করা বাধ্যতামূলক, এ কি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ গাইতে গেলে আজ এই সব পুরোনো পাপাচার বড় মনে পড়ছে, কারণ আজ বেমানান রকমের পবিত্র প্রফেশনে চলে এসেছি, অথচ এখানে আসার কথা ছিল না, বাঘা যতীনে পেয়িং গেস্ট হয়ে থাকতে থাকতে কি করে যেন আমি দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে চলে এসেছি, কিন্তু কলকাতাই তো কাছে পড়ত, এদিকে কসবায় বন্ধুর চারতলার ফ্ল্যাটে দুর্গাপুজোয় অষ্টমীর রাতে এক মৃত মানুষকে বন্ধ দরজায় করাঘাত করতে শোনার পরেও আমি শালা মার্ক্সবাদে বিশ্বাস হারালাম না, তবে ভাল্টের বেনিয়ামিনের চ্যালা হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ছিল, অবশ্য একসময় এই আমিই এসএফআই এর মিটিং এ বসে সন্ত্রাসের বিস্তারিত পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে ভেবেছিলাম, বিপ্লব এভাবেই দীর্ঘজীবি হবে...
পহেলি বার...মহব্বত কি হ্যায়...আখরি বার...মহব্বত কি হ্যায়
আমাদের পার্ট টুর সিট পড়েছিল সেন্ট জ়েভিয়ার্সে, আর তিন বছরের কলেজ জীবন শেষ হয়ে এল যেদিন, আমরা অনেকেই বুঝতে পারিনি এরপর কোথায় যাওয়া দরকার, মেয়েরা পরীক্ষা দিয়েছিল আচার্য জগদীশ বসু কলেজে, রবীন্দ্র সদনে গুলতানি করার জন্য একত্রিত হয়ে দেখা গেল খুব ফাঁকা ফাঁকা ঠেকছে, তাই আমরা গা ঘেঁষে জড়ো হয়ে বসলাম, অনেকেই গর্ভযন্ত্রণা কাকে বলে বুঝতে পারছিল, কারণ বর্তমানের গর্ভ থেকে ভবিষ্যত এবার জন্ম নিতে চাইছে, যেমন আবহমান কাল ধরে চলে আসছে, আমরা রবীন্দ্র সদন থেকে বির্জিতলাও ফিরে দেখলাম, তারপর হেস্টি আলিপুরির আস্তানা বেলভেডিয়ার হয়ে উৎসভূমিতে ফিরেছি, হাজরা মোড়ে তখন রাত সাড়ে নটার কলকাতা উত্তর-আশ্লেষ তৃপ্তি নিয়ে শুয়ে আছে, এবং সেই ছাড়াছাড়ির পরে আমরা সবাই আর কখনো একসঙ্গে দেখা করতে পারিনি, এলিয়ট পার্কে দুহাজার নয় সালে চেষ্টা হয়েছিল অবশ্য, কারণ পারিজাতের কাঠি রোল এখনও আলোচনার সেরা সঙ্গত, যদিও যমুনা, গ্লোব আর লাইট হাউস এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে আমরা পার্ক স্ট্রীটের উত্তরে যেতে কোনও উৎসাহ পেলাম না, নিউ এম্পায়ারে হিন্দি ছবি, যাতে সবাই একমত হল যে ঘোর কলিকাল চলছে কলকাতায়...
জাদু হ্যায় নশা হ্যায়, তুঝকো ভুলাকে অব যাউঁ কাহাঁ
হার্বার্ট দেখে প্রচুর পুড়কি খেয়ে পুরোনো কলকাতাকে প্রেম নিবেদন করলাম কলেজ স্ট্রিটে, অথচ সে মাগিটা চলে গেল ধাপার মাঠে মিলনমেলায় (আমি আজকাল হরিয়ানভি শিখছি সেজন্য কিছু রুক্ষতা চলে আসতে পারে), বোধহয় ব্যর্থ প্রেমিকের মত আমি আজীবন কলকাতাকে ফ্যান্টাসাইজ় করে যাব, তবে এও তো ঠিক যে আমি অলীক দিগন্তে স্পেশ্যাল এজুকেশন জ়োনে গিয়ে একপাল মোষের তাড়া খেয়ে ওঠার আগেই যাদবপুরে লেডিস হোস্টেলের বাইরে তোমার সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম, এবং এভাবে মানুষ গ্র্যাজুয়েট থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট হয়ে ওঠে, তবে আয়রনি এই যে মকাইবাড়ির চা খাওয়ার জন্য আমাকে কলকাতা ছেড়ে দিল্লি আসতে হল...
দৃষ্টিতে ঝরাও আগুন, ইতিহাস সেঁকে নেবে রুটি
ওফ কি জঘন্য আগুন জ্বেলেছ এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়, অশনমিতা, আর আমাকে সাক্ষী রেখে তুমি ন্যাশনাল লাইব্রেরি কমপাউন্ডে তোমার প্রোজেক্ট প্রোপোজ়াল হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে একটা ছোট্ট কুত্তুছানাকে নিয়ে আদর করে যে বাঙালি রোম্যান্টিকতা দেখালে, তা শুধু এই কারণে নয় যে তখন সত্যি গঙ্গার দিক থেকে খুব হাওয়া বইছিল, আসলে আলিপুরের খাঁচায় থাকা বাঘ সিংহরা মাঝে মাঝে বাইরে বেড়িয়ে এসে হুদো হুদো প্রফেসরদের একটি থাপ্পড় মেরে যেতেই পারে, যারা কলেজ সার্ভিস কমিশনে সিপিএম এর এঁটোকাঁটা চেটে চেটে গন্ডার হয়ে গেছে, আর আমি ভুল বললে শুধরে দিও, আমি কলকাতা ছেড়ে আসার রাতে তোমার অরন্ধন ছিল যতদূর মনে পড়ে, তোমার হতাশা ঘটালে আমি দুঃখিত, মিয়া কুইপা, তবে আমি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালাব ভাবিনি কখনও, এবং আমি আজ এ যুদ্ধে নতুন ফ্রন্ট খুলছি পশ্চিমপ্রান্তে, তুমি পূর্বদিকে আমার অপেক্ষায় থেক, আমাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা ইতিহাস উড়িয়ে দিচ্ছে না...
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১
Sunday, February 27, 2011
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment