রেনিগেডঃ যাদবপুর
প্লিজ়, ফিরে তাকিয়ো না, সোনা...
এইট বি তে বেজে চলে মৃদু হিম হেমন্ত ঘড়ি
এনুই গুঁতোয় হয় এ দিনের শুরু আর শেষ
কে এম আরে খোঁচা খেলে এ লাইফ কি হেবি ডিভাইন
জেনে নিয়ো। কেন কি যে, তাকালেই, বেবি, খাবে কেস
ওগো পাতা, ঝরে গেলে ? আমি যে এখনও ডালে ঝুলি
প্যাঁদানির ভয়ে, জানো ! কেউ ছেড়ে কথা বলছেনা
চাঁটগায়ে মালাউন, গুজরাটে আমি হই মোল্লা
কোথায় তাকাব, তাই ঢুকুঢুকু... আর ভাল্লাগছে না
তুমি যদি ঢপ গেলো, আমি যাই এ সি ক্যানটিনে
তুমি ডিএসও হলে, আমি ঠিক এসএফআই হব
তুমি শালা কবি হলে, আমি হোল রাত পানু দেখি
মাইরি, তাকিয়ো না। আজ রাতে রশেবশে রব...
ড্যামিট, দ্যাখো যদি। আর তো কেয়ার করব না
তবুও, বিসিচ ইউ... প্লিজ় ফিরে তাকিয়ো না সোনা
Sunday, February 27, 2011
রোমন্থণ
এমন বসন্ত দিনে...বাড়ি ফের মাংস কিনে...
এই সব বসন্ত সন্ধ্যায় পূর্বস্মৃতি ফিরে আসে, আর তুমিও আমার কাছে ফেরার চেষ্টা করেছিলে, যখন মনে হয়েছিল সম্পূর্ণ মানুষজন্ম কেটে যাবে শুধু অতীতকথনে, আর আঙুল ছুঁইয়ে পারমিতা কেটে পড়ল অথচ ঘড়িতে মোটে সাড়ে ছটা, আমি সেরকম সন্ধ্যার শপথ নিয়ে বলছি, বইমেলা ময়দান থেকে সরে যাবার দুঃখ আমরা এখনও দুই ভুরুর মাঝে জমিয়ে রাখি, আর খুব সম্ভবত আমি এই জবানবন্দি শেষ হওয়ার আগেই কলকাতা ছেড়ে চলে যাব, তাই বলে তুমি উড়ালপুল দিয়ে ভিক্টোরিয়া থেকে পার্ক সার্কাসে যাওয়ার সময় ক্যামাক স্ট্রিটের দিকে অপাঙ্গে তাকানো বন্ধ কোরো না, কারণ ওখানে ভিন্ন ডাইমেনশনে আমাদের দু একটি প্রতিচ্ছবি এখনও উত্তর অভিমুখে হেঁটে চলেছে, যেমন দুহাজার এক সালে আমরা হেঁটে চলতাম, আমি আর আমার পুরুষবন্ধু অভিজিত, সমান্তরালে সেই লক্ষ্যহীন এক্সাইড যেখানে আমার পূর্বপুরুষরা একটি সওদাগরি আপিসে বংশপরম্পরায় চাকরি করতেন, এও বলা দরকার যে হাজরা থেকে লেক মার্কেট পর্যন্ত পায়েলের হাত ধরে হাঁটতে গেলে তখন কোনও প্যারোলের আবেদন করতে হত না, আজ যেরকম প্রবাস থেকে ফিরতে গেলে করা বাধ্যতামূলক, এ কি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ গাইতে গেলে আজ এই সব পুরোনো পাপাচার বড় মনে পড়ছে, কারণ আজ বেমানান রকমের পবিত্র প্রফেশনে চলে এসেছি, অথচ এখানে আসার কথা ছিল না, বাঘা যতীনে পেয়িং গেস্ট হয়ে থাকতে থাকতে কি করে যেন আমি দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে চলে এসেছি, কিন্তু কলকাতাই তো কাছে পড়ত, এদিকে কসবায় বন্ধুর চারতলার ফ্ল্যাটে দুর্গাপুজোয় অষ্টমীর রাতে এক মৃত মানুষকে বন্ধ দরজায় করাঘাত করতে শোনার পরেও আমি শালা মার্ক্সবাদে বিশ্বাস হারালাম না, তবে ভাল্টের বেনিয়ামিনের চ্যালা হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ছিল, অবশ্য একসময় এই আমিই এসএফআই এর মিটিং এ বসে সন্ত্রাসের বিস্তারিত পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে ভেবেছিলাম, বিপ্লব এভাবেই দীর্ঘজীবি হবে...
পহেলি বার...মহব্বত কি হ্যায়...আখরি বার...মহব্বত কি হ্যায়
আমাদের পার্ট টুর সিট পড়েছিল সেন্ট জ়েভিয়ার্সে, আর তিন বছরের কলেজ জীবন শেষ হয়ে এল যেদিন, আমরা অনেকেই বুঝতে পারিনি এরপর কোথায় যাওয়া দরকার, মেয়েরা পরীক্ষা দিয়েছিল আচার্য জগদীশ বসু কলেজে, রবীন্দ্র সদনে গুলতানি করার জন্য একত্রিত হয়ে দেখা গেল খুব ফাঁকা ফাঁকা ঠেকছে, তাই আমরা গা ঘেঁষে জড়ো হয়ে বসলাম, অনেকেই গর্ভযন্ত্রণা কাকে বলে বুঝতে পারছিল, কারণ বর্তমানের গর্ভ থেকে ভবিষ্যত এবার জন্ম নিতে চাইছে, যেমন আবহমান কাল ধরে চলে আসছে, আমরা রবীন্দ্র সদন থেকে বির্জিতলাও ফিরে দেখলাম, তারপর হেস্টি আলিপুরির আস্তানা বেলভেডিয়ার হয়ে উৎসভূমিতে ফিরেছি, হাজরা মোড়ে তখন রাত সাড়ে নটার কলকাতা উত্তর-আশ্লেষ তৃপ্তি নিয়ে শুয়ে আছে, এবং সেই ছাড়াছাড়ির পরে আমরা সবাই আর কখনো একসঙ্গে দেখা করতে পারিনি, এলিয়ট পার্কে দুহাজার নয় সালে চেষ্টা হয়েছিল অবশ্য, কারণ পারিজাতের কাঠি রোল এখনও আলোচনার সেরা সঙ্গত, যদিও যমুনা, গ্লোব আর লাইট হাউস এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে আমরা পার্ক স্ট্রীটের উত্তরে যেতে কোনও উৎসাহ পেলাম না, নিউ এম্পায়ারে হিন্দি ছবি, যাতে সবাই একমত হল যে ঘোর কলিকাল চলছে কলকাতায়...
জাদু হ্যায় নশা হ্যায়, তুঝকো ভুলাকে অব যাউঁ কাহাঁ
হার্বার্ট দেখে প্রচুর পুড়কি খেয়ে পুরোনো কলকাতাকে প্রেম নিবেদন করলাম কলেজ স্ট্রিটে, অথচ সে মাগিটা চলে গেল ধাপার মাঠে মিলনমেলায় (আমি আজকাল হরিয়ানভি শিখছি সেজন্য কিছু রুক্ষতা চলে আসতে পারে), বোধহয় ব্যর্থ প্রেমিকের মত আমি আজীবন কলকাতাকে ফ্যান্টাসাইজ় করে যাব, তবে এও তো ঠিক যে আমি অলীক দিগন্তে স্পেশ্যাল এজুকেশন জ়োনে গিয়ে একপাল মোষের তাড়া খেয়ে ওঠার আগেই যাদবপুরে লেডিস হোস্টেলের বাইরে তোমার সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম, এবং এভাবে মানুষ গ্র্যাজুয়েট থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট হয়ে ওঠে, তবে আয়রনি এই যে মকাইবাড়ির চা খাওয়ার জন্য আমাকে কলকাতা ছেড়ে দিল্লি আসতে হল...
দৃষ্টিতে ঝরাও আগুন, ইতিহাস সেঁকে নেবে রুটি
ওফ কি জঘন্য আগুন জ্বেলেছ এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়, অশনমিতা, আর আমাকে সাক্ষী রেখে তুমি ন্যাশনাল লাইব্রেরি কমপাউন্ডে তোমার প্রোজেক্ট প্রোপোজ়াল হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে একটা ছোট্ট কুত্তুছানাকে নিয়ে আদর করে যে বাঙালি রোম্যান্টিকতা দেখালে, তা শুধু এই কারণে নয় যে তখন সত্যি গঙ্গার দিক থেকে খুব হাওয়া বইছিল, আসলে আলিপুরের খাঁচায় থাকা বাঘ সিংহরা মাঝে মাঝে বাইরে বেড়িয়ে এসে হুদো হুদো প্রফেসরদের একটি থাপ্পড় মেরে যেতেই পারে, যারা কলেজ সার্ভিস কমিশনে সিপিএম এর এঁটোকাঁটা চেটে চেটে গন্ডার হয়ে গেছে, আর আমি ভুল বললে শুধরে দিও, আমি কলকাতা ছেড়ে আসার রাতে তোমার অরন্ধন ছিল যতদূর মনে পড়ে, তোমার হতাশা ঘটালে আমি দুঃখিত, মিয়া কুইপা, তবে আমি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালাব ভাবিনি কখনও, এবং আমি আজ এ যুদ্ধে নতুন ফ্রন্ট খুলছি পশ্চিমপ্রান্তে, তুমি পূর্বদিকে আমার অপেক্ষায় থেক, আমাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা ইতিহাস উড়িয়ে দিচ্ছে না...
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১
এই সব বসন্ত সন্ধ্যায় পূর্বস্মৃতি ফিরে আসে, আর তুমিও আমার কাছে ফেরার চেষ্টা করেছিলে, যখন মনে হয়েছিল সম্পূর্ণ মানুষজন্ম কেটে যাবে শুধু অতীতকথনে, আর আঙুল ছুঁইয়ে পারমিতা কেটে পড়ল অথচ ঘড়িতে মোটে সাড়ে ছটা, আমি সেরকম সন্ধ্যার শপথ নিয়ে বলছি, বইমেলা ময়দান থেকে সরে যাবার দুঃখ আমরা এখনও দুই ভুরুর মাঝে জমিয়ে রাখি, আর খুব সম্ভবত আমি এই জবানবন্দি শেষ হওয়ার আগেই কলকাতা ছেড়ে চলে যাব, তাই বলে তুমি উড়ালপুল দিয়ে ভিক্টোরিয়া থেকে পার্ক সার্কাসে যাওয়ার সময় ক্যামাক স্ট্রিটের দিকে অপাঙ্গে তাকানো বন্ধ কোরো না, কারণ ওখানে ভিন্ন ডাইমেনশনে আমাদের দু একটি প্রতিচ্ছবি এখনও উত্তর অভিমুখে হেঁটে চলেছে, যেমন দুহাজার এক সালে আমরা হেঁটে চলতাম, আমি আর আমার পুরুষবন্ধু অভিজিত, সমান্তরালে সেই লক্ষ্যহীন এক্সাইড যেখানে আমার পূর্বপুরুষরা একটি সওদাগরি আপিসে বংশপরম্পরায় চাকরি করতেন, এও বলা দরকার যে হাজরা থেকে লেক মার্কেট পর্যন্ত পায়েলের হাত ধরে হাঁটতে গেলে তখন কোনও প্যারোলের আবেদন করতে হত না, আজ যেরকম প্রবাস থেকে ফিরতে গেলে করা বাধ্যতামূলক, এ কি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ গাইতে গেলে আজ এই সব পুরোনো পাপাচার বড় মনে পড়ছে, কারণ আজ বেমানান রকমের পবিত্র প্রফেশনে চলে এসেছি, অথচ এখানে আসার কথা ছিল না, বাঘা যতীনে পেয়িং গেস্ট হয়ে থাকতে থাকতে কি করে যেন আমি দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে চলে এসেছি, কিন্তু কলকাতাই তো কাছে পড়ত, এদিকে কসবায় বন্ধুর চারতলার ফ্ল্যাটে দুর্গাপুজোয় অষ্টমীর রাতে এক মৃত মানুষকে বন্ধ দরজায় করাঘাত করতে শোনার পরেও আমি শালা মার্ক্সবাদে বিশ্বাস হারালাম না, তবে ভাল্টের বেনিয়ামিনের চ্যালা হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ছিল, অবশ্য একসময় এই আমিই এসএফআই এর মিটিং এ বসে সন্ত্রাসের বিস্তারিত পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে ভেবেছিলাম, বিপ্লব এভাবেই দীর্ঘজীবি হবে...
পহেলি বার...মহব্বত কি হ্যায়...আখরি বার...মহব্বত কি হ্যায়
আমাদের পার্ট টুর সিট পড়েছিল সেন্ট জ়েভিয়ার্সে, আর তিন বছরের কলেজ জীবন শেষ হয়ে এল যেদিন, আমরা অনেকেই বুঝতে পারিনি এরপর কোথায় যাওয়া দরকার, মেয়েরা পরীক্ষা দিয়েছিল আচার্য জগদীশ বসু কলেজে, রবীন্দ্র সদনে গুলতানি করার জন্য একত্রিত হয়ে দেখা গেল খুব ফাঁকা ফাঁকা ঠেকছে, তাই আমরা গা ঘেঁষে জড়ো হয়ে বসলাম, অনেকেই গর্ভযন্ত্রণা কাকে বলে বুঝতে পারছিল, কারণ বর্তমানের গর্ভ থেকে ভবিষ্যত এবার জন্ম নিতে চাইছে, যেমন আবহমান কাল ধরে চলে আসছে, আমরা রবীন্দ্র সদন থেকে বির্জিতলাও ফিরে দেখলাম, তারপর হেস্টি আলিপুরির আস্তানা বেলভেডিয়ার হয়ে উৎসভূমিতে ফিরেছি, হাজরা মোড়ে তখন রাত সাড়ে নটার কলকাতা উত্তর-আশ্লেষ তৃপ্তি নিয়ে শুয়ে আছে, এবং সেই ছাড়াছাড়ির পরে আমরা সবাই আর কখনো একসঙ্গে দেখা করতে পারিনি, এলিয়ট পার্কে দুহাজার নয় সালে চেষ্টা হয়েছিল অবশ্য, কারণ পারিজাতের কাঠি রোল এখনও আলোচনার সেরা সঙ্গত, যদিও যমুনা, গ্লোব আর লাইট হাউস এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে আমরা পার্ক স্ট্রীটের উত্তরে যেতে কোনও উৎসাহ পেলাম না, নিউ এম্পায়ারে হিন্দি ছবি, যাতে সবাই একমত হল যে ঘোর কলিকাল চলছে কলকাতায়...
জাদু হ্যায় নশা হ্যায়, তুঝকো ভুলাকে অব যাউঁ কাহাঁ
হার্বার্ট দেখে প্রচুর পুড়কি খেয়ে পুরোনো কলকাতাকে প্রেম নিবেদন করলাম কলেজ স্ট্রিটে, অথচ সে মাগিটা চলে গেল ধাপার মাঠে মিলনমেলায় (আমি আজকাল হরিয়ানভি শিখছি সেজন্য কিছু রুক্ষতা চলে আসতে পারে), বোধহয় ব্যর্থ প্রেমিকের মত আমি আজীবন কলকাতাকে ফ্যান্টাসাইজ় করে যাব, তবে এও তো ঠিক যে আমি অলীক দিগন্তে স্পেশ্যাল এজুকেশন জ়োনে গিয়ে একপাল মোষের তাড়া খেয়ে ওঠার আগেই যাদবপুরে লেডিস হোস্টেলের বাইরে তোমার সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম, এবং এভাবে মানুষ গ্র্যাজুয়েট থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট হয়ে ওঠে, তবে আয়রনি এই যে মকাইবাড়ির চা খাওয়ার জন্য আমাকে কলকাতা ছেড়ে দিল্লি আসতে হল...
দৃষ্টিতে ঝরাও আগুন, ইতিহাস সেঁকে নেবে রুটি
ওফ কি জঘন্য আগুন জ্বেলেছ এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়, অশনমিতা, আর আমাকে সাক্ষী রেখে তুমি ন্যাশনাল লাইব্রেরি কমপাউন্ডে তোমার প্রোজেক্ট প্রোপোজ়াল হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে একটা ছোট্ট কুত্তুছানাকে নিয়ে আদর করে যে বাঙালি রোম্যান্টিকতা দেখালে, তা শুধু এই কারণে নয় যে তখন সত্যি গঙ্গার দিক থেকে খুব হাওয়া বইছিল, আসলে আলিপুরের খাঁচায় থাকা বাঘ সিংহরা মাঝে মাঝে বাইরে বেড়িয়ে এসে হুদো হুদো প্রফেসরদের একটি থাপ্পড় মেরে যেতেই পারে, যারা কলেজ সার্ভিস কমিশনে সিপিএম এর এঁটোকাঁটা চেটে চেটে গন্ডার হয়ে গেছে, আর আমি ভুল বললে শুধরে দিও, আমি কলকাতা ছেড়ে আসার রাতে তোমার অরন্ধন ছিল যতদূর মনে পড়ে, তোমার হতাশা ঘটালে আমি দুঃখিত, মিয়া কুইপা, তবে আমি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালাব ভাবিনি কখনও, এবং আমি আজ এ যুদ্ধে নতুন ফ্রন্ট খুলছি পশ্চিমপ্রান্তে, তুমি পূর্বদিকে আমার অপেক্ষায় থেক, আমাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা ইতিহাস উড়িয়ে দিচ্ছে না...
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১
Sunday, February 13, 2011
প্রেম
রামকৃষ্ণও নরেনকে গান গাইবার জন্য ঈঙ্গিত করলেন। আজ গুরু বেশ সুস্থ আছেন, তাই শিষ্যরা সকলেই উৎফুল্ল। নরেন গান ধরলঃ
প্রভু ম্যয় গোলাম, ম্যয় গোলাম, ম্যয় গোলাম তেরা
তু দেওয়ান, তু দেওয়ান, তু দেওয়ান মেরা।
দো রোটি এক লঙ্গোটি, তেরে পাস ম্যয় পায়া
ভগতি ভাব আউর দে নাম তেরা গাঁবা...
এর পর সে গাইলঃ
নিবিড় আঁধারে মা তোর চমকে ও রূপরাশি
তাই যোগী ধ্যান ধরে হয়ে গিরিগুহাবাসী...
গান শুনতে শুনতে মহেন্দ্রলাল এক দৃষ্টিতে রামকৃষ্ণের দিকে চেয়ে রইলেন। এক সময় রামকৃষ্ণ বিছানা ছেড়ে নামলেন মেঝেতে, হাত তুললেন নাচের ভঙ্গিতে। অন্য দিন হলে মহেন্দ্রলাল প্রবল আপত্তি জানাতেন, সামান্য পরিশ্রমেই রোগ বেড়ে যাবার সম্ভাবনা। আজ কিন্তু কিছুই বললেন না। একটু নাচতে গিয়েই রামকৃষ্ণের ভাব সমাধি হল সামান্য সময়ের জন্য।
ডাক্তারের চক্ষু দিয়ে জল গড়াচ্ছে। গলার কাছে যেন আটকে রয়েছে কিছু। তিনি রুমাল বার করে মুখ মুছলেন।
স্বাভাবিক হয়ে রামকৃষ্ণ বললেন, ও কি গো, তুমি কাঁদছ নাকি?
মহেন্দ্রলাল বললেন্ ভাল গান শুনলে আমার বুকের ভেতরটা মোচড়ায়।
রামকৃষ্ণ কাছে এসে বললেন, তবে তো তোমার হয়ে এসেছে গো, তুমি মজেছ! আমায় থ্যাঙ্ক ইউ দাও!
মহেন্দ্রলাল ধরা গলায় বললেন, সে কথা কি তোমাকে মুখে বলতে হবে? আমি সামান্য ডাক্তার, তোমার কাছে এসে কত কী শিখলাম!
(সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, প্রথম আলো)
রাজনীতি না করলে এই প্রজন্মের ছেলেকে দিয়ে সামাজিকতা করানো বেশ মুশকিল। আমি আসলে বেশ অসামাজিক। বউ আর বই নিয়েই সবথেকে ভালো থাকি, আর তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক পাপাচার, যেমন গান, সিনেমা, গড়গড়া (হ্যাঁ, আজকাল একটা আলবোলা টেনে থাকি), আর ইন্টারনেট, ব্যস। কিন্তু যেদিন থেকে শিক্ষক রাজনীতিতে এসেছি, চাই বা না চাই, সবার সঙ্গে খেজুরে করে, এবং দরকারি লোকেদের সঙ্গে দহরম করে সময় ব্যয় করতে হয়। যদিও কুঁড়ে, তবে হাতে গোনা কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর আমন্ত্রণ ফেলা যায় না। একটি নিমন্ত্রণ রক্ষায় যেতে হল একটি কলেজে, তবে আমি যেমন খচ্চর, সেমিনার কাটিয়ে দিয়ে, একটি ডকু প্রদর্শন এড়িয়ে, সুফি গানের অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে গিয়ে পৌঁছলাম। ভাবলাম, যাই হোক, গান তো শোনা যাবে। গিয়ে দেখি, ডি ইউ টি এর সেক্রেটারিও এলেন। তিনি অবশ্য হাত টাত মিলিয়ে, মিনিট পাঁচেক গদিতে পশ্চাতদেশ ঠেকিয়ে সরে পড়লেন। একটি সুফি ব্যান্ড পারফর্ম করছিল। শুনতে থাকলাম।
শুনতে শুনতে ঘোর লাগতে লাগল। অসাধারণ বললে কম বলা হয়। কি উদ্দীপন, কি ভীষণ এক প্রেমের যুদ্ধঘোষণা মানুষের সব পরাজয়কে তুচ্ছ করে, মৃত্যুকে অতিক্রম করে, সেই আবেগ যা মানুষকে লহমার মধ্যে চিরন্তনকে ছুঁতে দেয়, অথচ যা নিবিড়ভাবে, তীব্রভাবে শরীরী, যা এই জগতের ধুলোকাদা মাখা সব আবিলতার মধ্যে মিশে থাকা এক চিমটে ঈশ্বরবিন্দু, এমন আকুলতা যার সঙ্গে বাউল, বোষ্টম, সুফি রা আত্মনিবেদন করেন, সেই সব মিলেমিশে আমাকে কতবার আবিষ্ট করল, মনে হল কয়েকবার মরলাম আর পুনর্জন্ম হল। মনে হচ্ছিল বেশিক্ষণ হৃদয় ও মস্তিষ্কের এমন মস্তি ও অর্গাজ়ম সহ্য করা বেশ কঠিন। কখনও খাজা মইনুদ্দিনের প্রতি প্রবল আকুতি, আমাকে গ্রহণ কর, কখনো সেই আকুতি ফিরে যাচ্ছে প্রেমিকার প্রতি, কবির নিজস্ব ঈশ্বরীর প্রতি, আ যা পিয়া, না যা পিয়া, ফিরে এস, ফিরে এস, তুমি জিতেছ, আমি হেরে গেছি, এই তো স্বীকার করলাম, ফিরে এস। এই দেখুন, এখনও লিখতে গিয়ে চোখ বাষ্পাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে... কখনও রাধা বলছেন, ও যেন ওর রঙে আমায় রাঙিয়ে দেয়, আর ধোপারা সারা জীবন ধুলেও সেই রঙ উঠবে না। কখনও মাতাল ও পাপাচারী কবি বলছেন, আমি যেখানে পড়ে আছি, ফেরেশ্তা সেখানে আসেন না, কিন্তু আমি জানি তুমি আমার জন্য আসবে। এরপর বুল্লে শাহ বলছেন, না না, ঈশ্বরের অভিমান নিয়ে মাথা ঘামিয়ো না, সে লোক তো সামান্য প্রার্থনা শুনলেই জল হয়ে যায়, কিন্তু যা সবথেকে কঠিন সেই কাজটা কর, আগে বান্ধবীর মান ভাঙাও। এঁরা প্রাণ দিয়ে, শরীর দিয়ে, কলিজা দিয়ে গাইছিলেন ও বাজাচ্ছিলেন, মাঝে দেখলাম আমার শুনতে এত অসহ্য লাগছিল, ওরা গাইছেন কি করে? গায়কদের মনে হচ্ছিল দিব্যোন্মাদ, একটা গান তো সরাসরি ঘোষণা করল, আমরা দিওয়ানা, আমরা ধর্মের কুটকচালি কি বুঝব, ওসব তো মোল্লা আর ব্রাহ্মণদের জন্য, ওরা আল্লাকে কাবা আর ভগবানকে কাশীতে বন্দি করে রাখে, আমরা দেখ শুধু এই উপাসনা জানি, এর নাম প্রেম।
এখন ব্যাপারটা হল, এই সুফি তো সেই ঈশ্বরের ভাষা, যার কথা এখন ঈগলটন ওঁর মত করে বলার চেষ্টা করছেন। জীবনের অর্থ যে ভালবাসা, এবং মৃত্যুকে জয় করতে পারে শুধু সে-ই, এবং মানুষ হয়ে মানুষকে প্রবলভাবে ভালবাসাই তো সাম্যের প্রধান ইন্ধন। সাম্য মানে তো ভক্তি আন্দোলন, তার মানে তো চৈতন্য, তার মানে তো মস্ত কলন্দর, তার মানে তো মানুষপুত্র যীশু, আর মহম্মদও সেই ভালবাসার কথাই বলছেন সুফি সাধকদের মতে। কিভাবে এমন ঈশ্বর-উপাসনা ওয়াহাবি নামক লগুড়ধারি গোরিলার কাছে হেরে যেতে পারে, এবং যদি হেরে যায়, তখন, ঈশ্বর নিজেই যে পরাভূত!
চৈতন্যের আন্দোলন কি রকম ভাব উচ্ছাস তৈরি করেছিল, তার বর্ণনা পড়েছি। নামগান ঠিক কিভাবে সবাইকে নাচাত, সেটা এই সুফি ব্যান্ডের অনুষ্ঠান দেখে টের পেলাম। কেসটা রীতিমত জন্ডিস। আর এরা যেন আমার মনের ভাব টের পেয়েই দমাদম মস্ত কলন্দর গাইতে গাইতে টুক করে হরিবোল হরিবোল বাজিয়ে দিলেন ব্যাকগ্রাউন্ডে। ধ্যাত্তেরি, শালা, মনে হচ্ছিল এইবার সমস্ত অপ্রেমকে টুসকি মেরে আমিও নাচতে লেগে যাই। আমার বন্ধুটি, তিনি ওই কলেজে ইতিহাস পড়ান, নাচছিলেন। আমি বাঙালি ভদ্রলোক কিনা (মনসুন ওয়েডিং ছবিতে এই সংক্রান্ত একটি ডায়ালগ ছিল, মনে পড়ছে), তার ওপর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মেম্বার, তাই নাচতে লজ্জা হল। নাচিনি, তবে চোখের জল এইভাবে কন্ট্রোল করা যায় না, হাত পা যেভাবে খানিকটা বশে রাখা যায়।
পৃথিবীর মুক্তি প্রেমে। মানুষের মুক্তি মার্ক্স যে কিছু বিমূর্ত অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে খুঁজেছেন, তার কারণ ওঁর সময়ে এনলাইটেনমেন্ট প্রজেক্ট শেষ হয়নি। মার্ক্স ভয়ানক ভুল করেছেন তাও বলা যায় না। গায়ক এক জায়গায় ভণলেন, এক বাদশা এক সুফি সাধককে বলে পাঠিয়েছিলেন, আমি দুনিয়ার মালিক, কিন্তু আমি আপনার অনুরাগী, আমি আপনার দরগায় আসব। সেই সাধক উত্তর দিয়েছিলেন, দেখুন, দুটো দরজা আছে আমার দরগায়। আপনি যে-ই একটা দরজা দিয়ে ঢুকবেন, আমি অন্যটা দিয়ে বেরিয়ে যাব। সুফির সঙ্গে ক্ষমতার আপস নেই।
এই বিপ্লব অসমাপ্ত রয়েছে, এই বিপ্লবকে সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাওয়া আমাদের কাজ। আর ভুল করবেন না, এর মানে কিন্তু কোনও বিমূর্ত বিশ্বজনীনতা নয়। সুফি ভীষণ পার্টিকুলার, ভীষণ কনক্রিট, মেটেরিয়েল, সুফি কে পেতে হলে একটি নির্দিষ্ট মাধ্যম চাই। আপনি যেমন শরীরী প্রেম করতে গেলে একটি মানুষকে করবেন, বিশ্বমানবের সঙ্গে সেটা সম্ভব নয়। সুফির প্রেমের মাধ্যম তার ভাষা। এঁরা যেমন পারসীক, পাঞ্জাবি, হিন্দভি, ব্রজ বিভিন্ন ভাষায় গাইলেন। পারসীক ভাষায় সেই বিখ্যাত প্রেমের মন্ত্র, তু মন শুদি, মন তু শুদম, মন তন শুদি, তু জাঁ শুদম, তুমি আমি হলে, আমি তুমি হলাম, আমি শরীর হলাম, তুমি প্রাণ হলে, তা যেমন সব মানুষকে আচ্ছন্ন করে, তেমনই মনে করিয়ে দেয়, প্রেম আসলে শরীর ও ভাষার মত, নির্দিষ্টকে আশ্রয় করেই প্রকাশিত হয়। মানুষ লিঙ্গুইস্টিক প্রাণি। বিশ্বজনীনতা আসে আমার বাঙালিয়ানাকে আশ্রয় করে, বাঙালিয়ানা-বিহীন বিশ্বমানবতা যারা কল্পনা করেন, তাঁরা জানেন না, তারা একটি নির্দিষ্ট সাম্রাজ্যবাদি মতবাদের ধারক।
প্রভু ম্যয় গোলাম, ম্যয় গোলাম, ম্যয় গোলাম তেরা
তু দেওয়ান, তু দেওয়ান, তু দেওয়ান মেরা।
দো রোটি এক লঙ্গোটি, তেরে পাস ম্যয় পায়া
ভগতি ভাব আউর দে নাম তেরা গাঁবা...
এর পর সে গাইলঃ
নিবিড় আঁধারে মা তোর চমকে ও রূপরাশি
তাই যোগী ধ্যান ধরে হয়ে গিরিগুহাবাসী...
গান শুনতে শুনতে মহেন্দ্রলাল এক দৃষ্টিতে রামকৃষ্ণের দিকে চেয়ে রইলেন। এক সময় রামকৃষ্ণ বিছানা ছেড়ে নামলেন মেঝেতে, হাত তুললেন নাচের ভঙ্গিতে। অন্য দিন হলে মহেন্দ্রলাল প্রবল আপত্তি জানাতেন, সামান্য পরিশ্রমেই রোগ বেড়ে যাবার সম্ভাবনা। আজ কিন্তু কিছুই বললেন না। একটু নাচতে গিয়েই রামকৃষ্ণের ভাব সমাধি হল সামান্য সময়ের জন্য।
ডাক্তারের চক্ষু দিয়ে জল গড়াচ্ছে। গলার কাছে যেন আটকে রয়েছে কিছু। তিনি রুমাল বার করে মুখ মুছলেন।
স্বাভাবিক হয়ে রামকৃষ্ণ বললেন, ও কি গো, তুমি কাঁদছ নাকি?
মহেন্দ্রলাল বললেন্ ভাল গান শুনলে আমার বুকের ভেতরটা মোচড়ায়।
রামকৃষ্ণ কাছে এসে বললেন, তবে তো তোমার হয়ে এসেছে গো, তুমি মজেছ! আমায় থ্যাঙ্ক ইউ দাও!
মহেন্দ্রলাল ধরা গলায় বললেন, সে কথা কি তোমাকে মুখে বলতে হবে? আমি সামান্য ডাক্তার, তোমার কাছে এসে কত কী শিখলাম!
(সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, প্রথম আলো)
রাজনীতি না করলে এই প্রজন্মের ছেলেকে দিয়ে সামাজিকতা করানো বেশ মুশকিল। আমি আসলে বেশ অসামাজিক। বউ আর বই নিয়েই সবথেকে ভালো থাকি, আর তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক পাপাচার, যেমন গান, সিনেমা, গড়গড়া (হ্যাঁ, আজকাল একটা আলবোলা টেনে থাকি), আর ইন্টারনেট, ব্যস। কিন্তু যেদিন থেকে শিক্ষক রাজনীতিতে এসেছি, চাই বা না চাই, সবার সঙ্গে খেজুরে করে, এবং দরকারি লোকেদের সঙ্গে দহরম করে সময় ব্যয় করতে হয়। যদিও কুঁড়ে, তবে হাতে গোনা কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর আমন্ত্রণ ফেলা যায় না। একটি নিমন্ত্রণ রক্ষায় যেতে হল একটি কলেজে, তবে আমি যেমন খচ্চর, সেমিনার কাটিয়ে দিয়ে, একটি ডকু প্রদর্শন এড়িয়ে, সুফি গানের অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে গিয়ে পৌঁছলাম। ভাবলাম, যাই হোক, গান তো শোনা যাবে। গিয়ে দেখি, ডি ইউ টি এর সেক্রেটারিও এলেন। তিনি অবশ্য হাত টাত মিলিয়ে, মিনিট পাঁচেক গদিতে পশ্চাতদেশ ঠেকিয়ে সরে পড়লেন। একটি সুফি ব্যান্ড পারফর্ম করছিল। শুনতে থাকলাম।
শুনতে শুনতে ঘোর লাগতে লাগল। অসাধারণ বললে কম বলা হয়। কি উদ্দীপন, কি ভীষণ এক প্রেমের যুদ্ধঘোষণা মানুষের সব পরাজয়কে তুচ্ছ করে, মৃত্যুকে অতিক্রম করে, সেই আবেগ যা মানুষকে লহমার মধ্যে চিরন্তনকে ছুঁতে দেয়, অথচ যা নিবিড়ভাবে, তীব্রভাবে শরীরী, যা এই জগতের ধুলোকাদা মাখা সব আবিলতার মধ্যে মিশে থাকা এক চিমটে ঈশ্বরবিন্দু, এমন আকুলতা যার সঙ্গে বাউল, বোষ্টম, সুফি রা আত্মনিবেদন করেন, সেই সব মিলেমিশে আমাকে কতবার আবিষ্ট করল, মনে হল কয়েকবার মরলাম আর পুনর্জন্ম হল। মনে হচ্ছিল বেশিক্ষণ হৃদয় ও মস্তিষ্কের এমন মস্তি ও অর্গাজ়ম সহ্য করা বেশ কঠিন। কখনও খাজা মইনুদ্দিনের প্রতি প্রবল আকুতি, আমাকে গ্রহণ কর, কখনো সেই আকুতি ফিরে যাচ্ছে প্রেমিকার প্রতি, কবির নিজস্ব ঈশ্বরীর প্রতি, আ যা পিয়া, না যা পিয়া, ফিরে এস, ফিরে এস, তুমি জিতেছ, আমি হেরে গেছি, এই তো স্বীকার করলাম, ফিরে এস। এই দেখুন, এখনও লিখতে গিয়ে চোখ বাষ্পাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে... কখনও রাধা বলছেন, ও যেন ওর রঙে আমায় রাঙিয়ে দেয়, আর ধোপারা সারা জীবন ধুলেও সেই রঙ উঠবে না। কখনও মাতাল ও পাপাচারী কবি বলছেন, আমি যেখানে পড়ে আছি, ফেরেশ্তা সেখানে আসেন না, কিন্তু আমি জানি তুমি আমার জন্য আসবে। এরপর বুল্লে শাহ বলছেন, না না, ঈশ্বরের অভিমান নিয়ে মাথা ঘামিয়ো না, সে লোক তো সামান্য প্রার্থনা শুনলেই জল হয়ে যায়, কিন্তু যা সবথেকে কঠিন সেই কাজটা কর, আগে বান্ধবীর মান ভাঙাও। এঁরা প্রাণ দিয়ে, শরীর দিয়ে, কলিজা দিয়ে গাইছিলেন ও বাজাচ্ছিলেন, মাঝে দেখলাম আমার শুনতে এত অসহ্য লাগছিল, ওরা গাইছেন কি করে? গায়কদের মনে হচ্ছিল দিব্যোন্মাদ, একটা গান তো সরাসরি ঘোষণা করল, আমরা দিওয়ানা, আমরা ধর্মের কুটকচালি কি বুঝব, ওসব তো মোল্লা আর ব্রাহ্মণদের জন্য, ওরা আল্লাকে কাবা আর ভগবানকে কাশীতে বন্দি করে রাখে, আমরা দেখ শুধু এই উপাসনা জানি, এর নাম প্রেম।
এখন ব্যাপারটা হল, এই সুফি তো সেই ঈশ্বরের ভাষা, যার কথা এখন ঈগলটন ওঁর মত করে বলার চেষ্টা করছেন। জীবনের অর্থ যে ভালবাসা, এবং মৃত্যুকে জয় করতে পারে শুধু সে-ই, এবং মানুষ হয়ে মানুষকে প্রবলভাবে ভালবাসাই তো সাম্যের প্রধান ইন্ধন। সাম্য মানে তো ভক্তি আন্দোলন, তার মানে তো চৈতন্য, তার মানে তো মস্ত কলন্দর, তার মানে তো মানুষপুত্র যীশু, আর মহম্মদও সেই ভালবাসার কথাই বলছেন সুফি সাধকদের মতে। কিভাবে এমন ঈশ্বর-উপাসনা ওয়াহাবি নামক লগুড়ধারি গোরিলার কাছে হেরে যেতে পারে, এবং যদি হেরে যায়, তখন, ঈশ্বর নিজেই যে পরাভূত!
চৈতন্যের আন্দোলন কি রকম ভাব উচ্ছাস তৈরি করেছিল, তার বর্ণনা পড়েছি। নামগান ঠিক কিভাবে সবাইকে নাচাত, সেটা এই সুফি ব্যান্ডের অনুষ্ঠান দেখে টের পেলাম। কেসটা রীতিমত জন্ডিস। আর এরা যেন আমার মনের ভাব টের পেয়েই দমাদম মস্ত কলন্দর গাইতে গাইতে টুক করে হরিবোল হরিবোল বাজিয়ে দিলেন ব্যাকগ্রাউন্ডে। ধ্যাত্তেরি, শালা, মনে হচ্ছিল এইবার সমস্ত অপ্রেমকে টুসকি মেরে আমিও নাচতে লেগে যাই। আমার বন্ধুটি, তিনি ওই কলেজে ইতিহাস পড়ান, নাচছিলেন। আমি বাঙালি ভদ্রলোক কিনা (মনসুন ওয়েডিং ছবিতে এই সংক্রান্ত একটি ডায়ালগ ছিল, মনে পড়ছে), তার ওপর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মেম্বার, তাই নাচতে লজ্জা হল। নাচিনি, তবে চোখের জল এইভাবে কন্ট্রোল করা যায় না, হাত পা যেভাবে খানিকটা বশে রাখা যায়।
পৃথিবীর মুক্তি প্রেমে। মানুষের মুক্তি মার্ক্স যে কিছু বিমূর্ত অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে খুঁজেছেন, তার কারণ ওঁর সময়ে এনলাইটেনমেন্ট প্রজেক্ট শেষ হয়নি। মার্ক্স ভয়ানক ভুল করেছেন তাও বলা যায় না। গায়ক এক জায়গায় ভণলেন, এক বাদশা এক সুফি সাধককে বলে পাঠিয়েছিলেন, আমি দুনিয়ার মালিক, কিন্তু আমি আপনার অনুরাগী, আমি আপনার দরগায় আসব। সেই সাধক উত্তর দিয়েছিলেন, দেখুন, দুটো দরজা আছে আমার দরগায়। আপনি যে-ই একটা দরজা দিয়ে ঢুকবেন, আমি অন্যটা দিয়ে বেরিয়ে যাব। সুফির সঙ্গে ক্ষমতার আপস নেই।
এই বিপ্লব অসমাপ্ত রয়েছে, এই বিপ্লবকে সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাওয়া আমাদের কাজ। আর ভুল করবেন না, এর মানে কিন্তু কোনও বিমূর্ত বিশ্বজনীনতা নয়। সুফি ভীষণ পার্টিকুলার, ভীষণ কনক্রিট, মেটেরিয়েল, সুফি কে পেতে হলে একটি নির্দিষ্ট মাধ্যম চাই। আপনি যেমন শরীরী প্রেম করতে গেলে একটি মানুষকে করবেন, বিশ্বমানবের সঙ্গে সেটা সম্ভব নয়। সুফির প্রেমের মাধ্যম তার ভাষা। এঁরা যেমন পারসীক, পাঞ্জাবি, হিন্দভি, ব্রজ বিভিন্ন ভাষায় গাইলেন। পারসীক ভাষায় সেই বিখ্যাত প্রেমের মন্ত্র, তু মন শুদি, মন তু শুদম, মন তন শুদি, তু জাঁ শুদম, তুমি আমি হলে, আমি তুমি হলাম, আমি শরীর হলাম, তুমি প্রাণ হলে, তা যেমন সব মানুষকে আচ্ছন্ন করে, তেমনই মনে করিয়ে দেয়, প্রেম আসলে শরীর ও ভাষার মত, নির্দিষ্টকে আশ্রয় করেই প্রকাশিত হয়। মানুষ লিঙ্গুইস্টিক প্রাণি। বিশ্বজনীনতা আসে আমার বাঙালিয়ানাকে আশ্রয় করে, বাঙালিয়ানা-বিহীন বিশ্বমানবতা যারা কল্পনা করেন, তাঁরা জানেন না, তারা একটি নির্দিষ্ট সাম্রাজ্যবাদি মতবাদের ধারক।
ঘৃণা
একবার দিল্লির একটি কলেজ জুড়ে প্রবল গুজব ছড়াল, শ্রী অমুক ঝা এইবার ভাইস প্রিন্সিপাল হচ্ছেন। সেই লোকটি সম্পর্কে যারা অবহিত ছিলেন, তারা সবাই বেশ অবাক। ভদ্রলোক হচ্ছেন, যাকে এদেশের ভাষায় বলে চম্পক। গুড ফর নাথিং, নিজে একবার রটিয়েছিলেন যে উনি খুব শিগগির ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, তবে তার আগে সুপ্রিম কোর্টের জজসাহেব হওয়ার আশু সম্ভাবনা (বিহার থেকে আইনের একটি ডিগ্রি বাগিয়েছিলেন একদা), এক জ্যোতিষী নাকি ওকে হাত দেখে বলেছে। কাজেই সবাই খোঁজাখুঁজি করে দেখলেন যে এবারও গুজবের মূল সুত্রটি উনি নিজেই, উনিই ছড়িয়েছেন।
সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, সিপিএম নাকি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। প্রবল গুজব বাজারে। দিল্লি অবধিও পৌঁছে গেছে। সিপিএম বিরোধি বিকল্প বাম মঞ্চের একজন পাঞ্জাবি শিক্ষক নেতা আমায় শুধোলেন, সিপিএম নাকি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে? আমি জিগ্যেস করলাম, কোথথেকে জানলেন? জানা গেল, সিপিএম এর একজন ওঁকে বলেছে।
১২ই ফেব্রুয়ারি রাতে স্টার আনন্দ একটি ভিডিও ক্লিপিং দেখায়। হলদিয়ার প্রাক্তন এম পি লক্ষণ শেঠ কে দেখা যাচ্ছিল। একদল মানুষ তাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তিনি গাড়িতে বসে বলছেন, এই চুপ, তোমরা তৃণমূল, এ-এ-এই, এক মারব, তিনি মারার জন্য হাত তুলে বোঝালেন, যে কিভাবে মারবেন। এক দরিদ্র মহিলা, সম্ভবত পুলিস ও হার্মাদের হাতে পিটুনি খেয়েছেন, তাঁর একটি বাচ্চা ছেলে আছে, তার হাঁটুতে দগদগে একটা ক্ষতচিহ্ন, লক্ষণ সেই মহিলাকে বললেন জল্লাদ, এবং সেই মহিলা চিৎকার করে বলছিলেন, যে তারা একসময় লালঝান্ডা নিয়ে ইনকিলাব জিন্দাবাদ করেছেন, তখন তো জল্লাদ বলা হয়নি।
সিপিএম এর লোকেরা ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে সর্বত্র বলে চলেছে তৃণমূল আর মাওবাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। সিপিএম এর বিরোধিতা করলে এ দুটোর একটা নির্ঘাত না হয়ে যায় না, এমনকি দুটোই হতে পারে। এবং গোয়েবলসীয় কায়দায় এক কথা হাজার বার বললে যেমন হয় আর কি, অনেকেই এটা খেয়ে ফেলেছেন। যেটা পশ্চিমবঙ্গবাসি মাত্রেই জানেন, মাওবাদিরা একদম মাইক্রোস্কোপিক সেখানে, এখনও পর্যন্ত, তবে যে কায়দায় সিপিএম নন্দীগ্রামে ও লালগড়ে সূর্যোদয় ইত্যাদি ঘটিয়েছে তাতে মাওবাদিদের সামনে বা যারাই হিংসার রাজনীতি করেন তাদের জন্য একটা বড় সুযোগ এসে গেছে, কারণ সিপিএম প্যাঁদানি ছাড়া আর কোনও ভাষা বোঝে না, আর যারা লাথের ভুত, তারা বাতে মানবে কেন, তাই সাধারণ মানুষ আজকাল সিপিএম মরলে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেন। বিষয়টি বিপজ্জনক, এবং পশ্চিমবঙ্গের সাড়ে সর্বনাশ হওয়ার চমৎকার সম্ভাবনা এতে গভীরভাবে প্রোথিত আছে।
সিপিএম কে তৃণমূল হারাচ্ছে না। তৃণমূলের নিজস্ব শক্তি সংগঠন যা আছে, তার কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। সিপিএম কে হারাচ্ছে সিপিএম থেকে বেরিয়ে আসা মানুষেরা। যারাই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তারা এটা জানেন।
লক্ষণ শেঠ এর ক্লিপিং এ আরো বাকি ছিল। দেখা গেল এবার দৃশ্যান্তর। নেতা এখন একটি ভবনের ভেতরে, একদল বিক্ষোভকারির সামনে গর্দভবিনিন্দিত গলায় এবার নেতা হুমকি দিচ্ছেন, এ-এ-এই! কে? কে বলল হার্মাদ? তোরা হার্মাদ, তোরা জল্লাদ, তোরা তৃণমূল। আস্ফালন করছেন, এমন মারব না!
আবার দৃশ্যান্তর। এবার রামানুজ বলছেন, এরা নৈরাজ্যবাদি, সুতরাং হচ্ছে (সিপিএম এর বিমান বসু থেকে, বিনয় কোনার থেকে, নিরুপম সেন থেকে পুঁটি নেতা পর্যন্ত সবাই এই "হচ্ছে" শব্দটা মুদ্রাদোষ হিসেবে ব্যবহার করেন, রেজিমেন্টেশন কাকে বলে তা এদের দেখলে টের পাওয়া যায়, দিল্লিতে গোপালন ভবনে বসে ইয়েচুরি যা বলছেন, তা হুবহু সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে পার্টির নেতা কাম প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার বমি করে দেন) এই সব জল্লাদদের মানুষ দেখে নেবে।
আমরা, মানে আমি ও আমার স্ত্রী একবার হলদিয়ায় গেছিলাম। তখন চাকরি খুঁজছি। ওখানে লক্ষণবাবুরা শিক্ষার ভাল বেসাতি করেন, Icare নামে একটা কম্পানি খুলেছেন, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ম্যানেজমেন্ট কলেজ, ল কলেজ, কি নেই...আমরা ইন্টারভিউ দিলাম, বলা হল নির্বাচিত হয়েছি, জানতে চাওয়া হল কবের মধ্যে জয়েন করতে পারব, আমরা বললাম একটু ভেবে দেখার সময় চাই, সত্যি বলতে গেলে কি, কলকাতা থেকে এত দূরে, এত প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে প্রচুর ঢক্কানিনাদ সত্বেও উন্নয়ন প্রায় কিছুই হয়নি, একজায়গায় চলতে চলতে বাসের কন্ডাক্টর ঘোষণা করেছিল, সিটি সেন্টার, সিটি সেন্টার, সেখানে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি, একটা ধু ধু মাঠ, কয়েকটা গরু চরছে ইতস্তত, এরকম জায়গায় যাওয়াটা বেশ কঠিন।
ফিরে এলাম, বললাম, দিন দুয়েকের মধ্যেই জানাব। তা আমরা কিছু জানানোর আগেই, ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর ফোন করে বললেন, আমাদের এসে আরেকবার ইন্টারভিউ দিতে হবে। কেন? না আগেরবার লক্ষণ শেঠ ছিলেন না, উনি নিজে একবার ইন্টারভিউ নেবেন, তারপরে চাকরি পাকা হবে। ভাবুন, আমাদের ইন্টারভিউ নেবে লক্ষণ শেঠ! বলা বাহুল্য, এই প্রস্তাবের উত্তরে কয়েকটি কাঁচা খিস্তি দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি, তখনও বেঙ্গলে থাকি, তাই বিনীতভাবে আমাদের অসহায়তার কথা জানিয়ে হলদিয়ায় না যেতে পারার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
এটা সত্যি ঘটনা। আরেকটা ঘটনা যেটা ঘটতে চলেছে, সেটা বলে রাখি, সিপিএম এর নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ বিধানসভা নির্বাচনে ওদের পার্টি হেরে ঢোল হওয়ার পরে বাংলা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবেন, কারণ মানুষের ঘৃনা যে জায়গায় পৌঁছেছে, ওদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি জ়েড ক্যাটিগরিতেও নিশ্চিত করা যাবে না। ওরা লিঞ্চিং এর শিকার হতে পারেন, কারণ, মানুষ ওদের আর সহ্য করতে পারছেন না। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি, স্টার আনন্দের ক্লিপিং এ লক্ষণের আস্ফালন দেখতে দেখতে আমারই হাত নিশপিশ করছিল, মনে হচ্ছিল ডাস্টার দিয়ে মেরে মেরে ওর মাথার ঘিলু বার করে দিই। মানুষের এত ঘৃণা, এত অভিশাপ মাথায় নিয়ে এই ফ্যাসিস্টরা কোথায় পালাবে, আর যখন এদের রথের চাকা বসে যাবে, কোন ন্যানো-আকাঙ্ক্ষী, সেক্টরফাইভ-গামী, আজকাল ও গণশক্তি পড়া সরকারি অফিস-স্কুল-কলেজ এর চাকুরিজীবি এদের দেহ-রক্ষা করবে?
সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, সিপিএম নাকি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। প্রবল গুজব বাজারে। দিল্লি অবধিও পৌঁছে গেছে। সিপিএম বিরোধি বিকল্প বাম মঞ্চের একজন পাঞ্জাবি শিক্ষক নেতা আমায় শুধোলেন, সিপিএম নাকি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে? আমি জিগ্যেস করলাম, কোথথেকে জানলেন? জানা গেল, সিপিএম এর একজন ওঁকে বলেছে।
১২ই ফেব্রুয়ারি রাতে স্টার আনন্দ একটি ভিডিও ক্লিপিং দেখায়। হলদিয়ার প্রাক্তন এম পি লক্ষণ শেঠ কে দেখা যাচ্ছিল। একদল মানুষ তাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তিনি গাড়িতে বসে বলছেন, এই চুপ, তোমরা তৃণমূল, এ-এ-এই, এক মারব, তিনি মারার জন্য হাত তুলে বোঝালেন, যে কিভাবে মারবেন। এক দরিদ্র মহিলা, সম্ভবত পুলিস ও হার্মাদের হাতে পিটুনি খেয়েছেন, তাঁর একটি বাচ্চা ছেলে আছে, তার হাঁটুতে দগদগে একটা ক্ষতচিহ্ন, লক্ষণ সেই মহিলাকে বললেন জল্লাদ, এবং সেই মহিলা চিৎকার করে বলছিলেন, যে তারা একসময় লালঝান্ডা নিয়ে ইনকিলাব জিন্দাবাদ করেছেন, তখন তো জল্লাদ বলা হয়নি।
সিপিএম এর লোকেরা ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে সর্বত্র বলে চলেছে তৃণমূল আর মাওবাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। সিপিএম এর বিরোধিতা করলে এ দুটোর একটা নির্ঘাত না হয়ে যায় না, এমনকি দুটোই হতে পারে। এবং গোয়েবলসীয় কায়দায় এক কথা হাজার বার বললে যেমন হয় আর কি, অনেকেই এটা খেয়ে ফেলেছেন। যেটা পশ্চিমবঙ্গবাসি মাত্রেই জানেন, মাওবাদিরা একদম মাইক্রোস্কোপিক সেখানে, এখনও পর্যন্ত, তবে যে কায়দায় সিপিএম নন্দীগ্রামে ও লালগড়ে সূর্যোদয় ইত্যাদি ঘটিয়েছে তাতে মাওবাদিদের সামনে বা যারাই হিংসার রাজনীতি করেন তাদের জন্য একটা বড় সুযোগ এসে গেছে, কারণ সিপিএম প্যাঁদানি ছাড়া আর কোনও ভাষা বোঝে না, আর যারা লাথের ভুত, তারা বাতে মানবে কেন, তাই সাধারণ মানুষ আজকাল সিপিএম মরলে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেন। বিষয়টি বিপজ্জনক, এবং পশ্চিমবঙ্গের সাড়ে সর্বনাশ হওয়ার চমৎকার সম্ভাবনা এতে গভীরভাবে প্রোথিত আছে।
সিপিএম কে তৃণমূল হারাচ্ছে না। তৃণমূলের নিজস্ব শক্তি সংগঠন যা আছে, তার কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। সিপিএম কে হারাচ্ছে সিপিএম থেকে বেরিয়ে আসা মানুষেরা। যারাই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তারা এটা জানেন।
লক্ষণ শেঠ এর ক্লিপিং এ আরো বাকি ছিল। দেখা গেল এবার দৃশ্যান্তর। নেতা এখন একটি ভবনের ভেতরে, একদল বিক্ষোভকারির সামনে গর্দভবিনিন্দিত গলায় এবার নেতা হুমকি দিচ্ছেন, এ-এ-এই! কে? কে বলল হার্মাদ? তোরা হার্মাদ, তোরা জল্লাদ, তোরা তৃণমূল। আস্ফালন করছেন, এমন মারব না!
আবার দৃশ্যান্তর। এবার রামানুজ বলছেন, এরা নৈরাজ্যবাদি, সুতরাং হচ্ছে (সিপিএম এর বিমান বসু থেকে, বিনয় কোনার থেকে, নিরুপম সেন থেকে পুঁটি নেতা পর্যন্ত সবাই এই "হচ্ছে" শব্দটা মুদ্রাদোষ হিসেবে ব্যবহার করেন, রেজিমেন্টেশন কাকে বলে তা এদের দেখলে টের পাওয়া যায়, দিল্লিতে গোপালন ভবনে বসে ইয়েচুরি যা বলছেন, তা হুবহু সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে পার্টির নেতা কাম প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার বমি করে দেন) এই সব জল্লাদদের মানুষ দেখে নেবে।
আমরা, মানে আমি ও আমার স্ত্রী একবার হলদিয়ায় গেছিলাম। তখন চাকরি খুঁজছি। ওখানে লক্ষণবাবুরা শিক্ষার ভাল বেসাতি করেন, Icare নামে একটা কম্পানি খুলেছেন, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ম্যানেজমেন্ট কলেজ, ল কলেজ, কি নেই...আমরা ইন্টারভিউ দিলাম, বলা হল নির্বাচিত হয়েছি, জানতে চাওয়া হল কবের মধ্যে জয়েন করতে পারব, আমরা বললাম একটু ভেবে দেখার সময় চাই, সত্যি বলতে গেলে কি, কলকাতা থেকে এত দূরে, এত প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে প্রচুর ঢক্কানিনাদ সত্বেও উন্নয়ন প্রায় কিছুই হয়নি, একজায়গায় চলতে চলতে বাসের কন্ডাক্টর ঘোষণা করেছিল, সিটি সেন্টার, সিটি সেন্টার, সেখানে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি, একটা ধু ধু মাঠ, কয়েকটা গরু চরছে ইতস্তত, এরকম জায়গায় যাওয়াটা বেশ কঠিন।
ফিরে এলাম, বললাম, দিন দুয়েকের মধ্যেই জানাব। তা আমরা কিছু জানানোর আগেই, ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর ফোন করে বললেন, আমাদের এসে আরেকবার ইন্টারভিউ দিতে হবে। কেন? না আগেরবার লক্ষণ শেঠ ছিলেন না, উনি নিজে একবার ইন্টারভিউ নেবেন, তারপরে চাকরি পাকা হবে। ভাবুন, আমাদের ইন্টারভিউ নেবে লক্ষণ শেঠ! বলা বাহুল্য, এই প্রস্তাবের উত্তরে কয়েকটি কাঁচা খিস্তি দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি, তখনও বেঙ্গলে থাকি, তাই বিনীতভাবে আমাদের অসহায়তার কথা জানিয়ে হলদিয়ায় না যেতে পারার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
এটা সত্যি ঘটনা। আরেকটা ঘটনা যেটা ঘটতে চলেছে, সেটা বলে রাখি, সিপিএম এর নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ বিধানসভা নির্বাচনে ওদের পার্টি হেরে ঢোল হওয়ার পরে বাংলা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবেন, কারণ মানুষের ঘৃনা যে জায়গায় পৌঁছেছে, ওদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি জ়েড ক্যাটিগরিতেও নিশ্চিত করা যাবে না। ওরা লিঞ্চিং এর শিকার হতে পারেন, কারণ, মানুষ ওদের আর সহ্য করতে পারছেন না। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি, স্টার আনন্দের ক্লিপিং এ লক্ষণের আস্ফালন দেখতে দেখতে আমারই হাত নিশপিশ করছিল, মনে হচ্ছিল ডাস্টার দিয়ে মেরে মেরে ওর মাথার ঘিলু বার করে দিই। মানুষের এত ঘৃণা, এত অভিশাপ মাথায় নিয়ে এই ফ্যাসিস্টরা কোথায় পালাবে, আর যখন এদের রথের চাকা বসে যাবে, কোন ন্যানো-আকাঙ্ক্ষী, সেক্টরফাইভ-গামী, আজকাল ও গণশক্তি পড়া সরকারি অফিস-স্কুল-কলেজ এর চাকুরিজীবি এদের দেহ-রক্ষা করবে?
Friday, October 22, 2010
Bengal: Contradictions and Changes
(written from the perspective of an upper-caste male Hindu Bengali, with due apologies)
“Yaar, these days it has become so difficult for a Bengali to get into Delhi University”, a friend of mine from academia (who was by the way not a Bengali) was telling me, “and you know why? Because Bengalis are not loyal, you don't expect a Bengali to be a chamcha. But it is necessary to be loyal to some bigwigs if you want to get into the academic profession, or get promoted within it.”
I silently nodded in approval. I understood this to be a back-handed compliment. Why on earth disagree with someone who was saying a word or two in favour of the poor Bengalis in these rather tough and tight times? However, I wanted to add something of a silver lining to the otherwise bleak prospect of the Bengalis, so I pointed out “but then there are two disciplines, Economics and English where the bigwigs don't always get sufficient number of eligible candidates who are loyal too, so a Bengali can still get into academia without any loyalty provided he is from these two disciplines.”
That friend of mine gave a sardonic laughter. “things... not so easy, my dear. Academics in our country always suffer from too much of interference from powerful people.”
I gave him the example of Vivekananda. There was a time when he was Narendranath Dutta, and he badly needed a schoolteacher's job. But couldn't get any since he was not a Brahmo, and almost all the schools were run by the Brahmos at that point of time. Eventually got a job at Vidyasagar's school, but then lost it as he failed to curry favours with Vidyasagar's son-in-law who was the boss of the school. We mutually agreed that loyalty problem existed in academia since time immemorial.
However, as we were drawing near the place where he would get down (the conversation took place inside an auto rickshaw), I asked him a politically correct question: “don't you think this is kind of stereotyping, grand narrative and all? I mean, why, even a Bengali can be a chamcha like anyone else”. He chuckled, “then he will be isolated from the fellow-Bengalis, your people will mock him”, and got down.
Stereotyping is a culturally incorrect act. But as Terry Eagleton points out, it would be highly unnatural and unusual if a certain people after sharing a common habitat and history for a thousand years don't come to share some mutual characteristics as well.
Perhaps he was right. Bengalis are more comfortable in playing the rebel than playing a conformist. I started looking at this idea from different angles. It is not as if we are never loyal or committed to anything, but it is indeed true that we are less likely to remain loyal for long to any faith or tradition or boss. A land where water, foodgrains fruits and fish were abundant, one's survival did not depend much on loyalty and allegiance, since such multitudinous resources could not possibly be controlled by any singular authority. And I am not giving any value judgments. Its just that Bengalis like to take unprecedented steps once in a while. They are not afraid if that violently disrupts their long-lasting constancy to something. But hang on, am I carried away in my theorization by the recent climate of political change in Bengal?
That brought to my mind this question: is there any pattern to be drawn from history of Bengal, based on loyalty and disloyalty?
A cursory glance at the history of Bengal indeed revealed some startlingly pendular movements, a baffling dialectics of periodic 180 degree changes, a series of volte-faces we made throughout our history. Our origin was Dravidian and Austric. Initially this region had five kingdoms as the Puranas say: Anga, Vanga, Kalinga, Poundra and Suhma. These names are indicative of a Dravidian lineage and an Austric etymology. For details one has to see Nihar Ranjan Ray. Then We had the Aryans. Some historians say that the Alpine Aryans came to Bengal and some other parts of India, who were non-Vedic. So, you get your first conflicts, Nordic vs. Alpine, or Aryan vs Dravidian, or many other permutations and combinations of Aryan (Nordic vs Alpine) Vs Dravidian vs. Austric.
The first organized religion to which Bengal was exposed was not Sanatan Dharma (the Brahminical, Vedic religion), but Buddhism. Entire eastern India turned Buddhist, in fact. By all probability very few Nordic (who were Vedic Aryans) settlers might have been there in Bengal to put up any effective resistance against this egalitarian, anti-Vedic, Godless religion that effectively demolished the Brahminical hegemony and whose effects would last for more than next thousand years.
Then, the first king of any recorded historical significance who rises from Bengal, King Shoshanko, who controls and dominates a large part of North India and is an arch-rival of Harshavardhan, is a Brahmin. He is staunch anti-Buddhist, a follower of lord Shiva, and he is infamous for destroying the Bodhi tree at Bodhgaya (the tree beneath which Buddha attained enlightenment). Some descriptions about his physical features (for instance, he had red hair) indicate that he might have been a Nordic!
Then the next significant historical change in Bengal is the ascension of Pal dynasty. They were Buddhist. Their first King, Gopal, was chosen democratically by an assembly of feudal lords of Bengal. They rule us uninterruptedly for next four hundred years, which is no meagre achievement, in fact very few dynasties of the world have that kind of record till date. And it is commonly agreed that the Bengali people were formed during this period, that our first literature the Charyapada hymns were written during this period (9th century AD) and that they have been the dearest to the Bengalis among the history's hall of fame and as it is pointed out by Nihar Ranjan Ray, Bengali farmer girls still sing of King Mohipal while beating the chaff from the rice grain. There is a proverbial saying 'Dhan Bhangte Mohipaler Geet' (singing of Mohipal while making rice from paddy ).
Curiously, there is another proverb which comes to my mind, 'Dhan Bhangte Shiber Geet' (singing of Lord Shiva while making rice from paddy) which refers to anything incongruous and out of place. I personally believe that the latter proverb indicates that there must have been an attempt in some period to replace Mohipal's song with one devoted to lord Shiva which didn't go well with the public. It refers to the long battle between Buddhism and Sanatan Dharma fought on the terrains of Bengal.
And this brings us to the next volte-face Bengal would take, with the the coming of the Sen dynasty. They were going to implement a dogmatic Sanatan Dharma, which will have the Varna hierarchy, something Bengal didn't have till date, and in order to be able to do that, they brought Brahmins from North India. Their first kings were followers of Shiva. Already some centuries elapsed after the great Shankaracharya's re-establishment of Shaivaite Hindusim in the rest of India, so we can say that Bengal's turn to Sanatan Dharma was an eventuality. Besides, at its fag end, Buddhism was no longer a proto-communistic kind of thing. It was full of Tantra and black magic and esoteric sexual/fertility cults (what would be theorized as Vajrayana), and probably the legendary North Indian identification of Bengal with black magic began from this period. Under such circumstances, probably the Brahminical hierarchy looked more neat and clean than the occult practices.
Since Bengal did not have the usual Varna hierarchy, so all the different profession-based classes from the Buddhist past were blanket-accommodated under the category of Shudra. Even today, Bengal has got only Brahmins and Shudras, and no other Varnas. Bengali Baidyas are considered to be Shudras which is baffling, because Baidyas are said to be Brahmins (Baidya-Brahmin), they wear sacred threads, give their name as Sharma during all rituals, and all traditions of antiquity place them at the zenith of Brahminical hierarchy. According to Sanskritic tradition, a Brahmin who studies one Veda is a Pathak, who studies two Vedas is Dwivedi, Trivedi who studies three and Chaturvedi who studies four. One who studies Ayurveda after reading all the four Vedas is a Vaidya. How come they belong to Shudras? It can possibly be explained with the hypothesis that they were Buddhists to agreed to be a part of Brahminical resurgence.
The last Sen who was to rule entire Bengal (his descendants continued to rule parts of eastern Bengal for next two hundred years) was Lokkhon Sen. He, unlike his father and grandfather, turned to Vaishnavism. So probably, Sanatan Dharma's age old fight between the two gods, Shiva and Vishnu was to be reenacted once more on this newfound terrain of Bengal. But before there could have been any decisive outcome in this incipient struggle, Bengal was occupied by Bakhtiyar Khilji.
Islam came to Bengal in a major way. Prior to this, only some sailors from some navigating people of (mostly) Eastern Bengali origin took to Islam, since Islam now had a control over sea trade.
A lot of Buddists turned to Islam. A lot of Shudras did the same. And though a lot of them were forced, but not all conversions were done forcibly.
Political core of Bengal would be controlled by Pathans and Mughals for more than next 500 years. But during this period Hinduism would have the following evolution. Tantric cults from Vajrayana Buddhism would merge with Shaivaite cults of Sanatan Dharma, and give birth to one major school of Bengali Hinduism, namely, Shakto (worship of Shakti). The marriage of Durga and Shiva symbolically signifies this merger.
The other major (and rival) school was that of of Vaishnavism (reinvigorated after incorporation of Buddha into its pantheon as the ninth avatar of Vishnu), which though existed throughout Sanatan Dharma's history for thousands of years, but which now would be reborn in a radically new manner owing to the influence of Bhakti movement of the medieval age. Chaitanya would be the prophet of this newly born Boishnob movement. Many consider his movement to be a regeneration of Buddha's principles of equality and community erected on a base of devotion (Bhakti). If Shakto cult draws from Vajrayana Buddhism, Boishnob cult probably draws from classical Buddhism to some extent.
Shakto was the dominant cult among Bengali Hindus. Chaitanya was therefore the agent of change, he was the challenger. But Shaktos periodically used to attack his followers, they were violent (violence was prohibited for Vaishnavs following the Bhakti movement, whereas Shaktos had liberal recourse to violence as bloodshed was no sin in their cult) and that's one of the reasons why he had to leave Nabadwip (his hometown) finally. Of course the main reason was the threat posed by the Muslim ruler of Bengal.
Shakto remains the dominant cult among Bengali Hindus till date, and wherever Bengali Hindus go, they will build a Kalibari (abode of Kali). Till date these two cults, signified by their ruling deities Kali and Krishna respectively, are the two biggest currents of faith among Bengali Hindus.
The next curtain can be raised when Bengal is under British occupation. A society drowned neck deep in the violent orgies of Tantric cults, human sacrifices in front of Goddess Kali, and burning of Sati (wives' immolation at their husbands' pyre) will produce two great challengers of established religion: Raja Ram Mohan Roy and Vidyasagar. In Ram Mohan's project, there will be a social reformation that would like to return to the roots of Vedic religion, i.e. Sanatan Dharma. Brahmoism subsequently would be formed as a religious, social and cultural movement.
In a word, Brahmos opposed and challenged the very evolution of different religious currents in Bengal for last thousands of years. Naturally it was difficult for them to have a practical and performative dimension for their newfound religion, so they liberally borrowed from the Vaishnav practices of communal (some left-liberals have made this word a cliched signfier for religious fundamentalism, but communal is after all an adjective derived from the word community) songs and music, procession and dance, sentimental piety etc. In fact, one Brahmo leader Keshub Chunder Sen (that's how Keshob Chondro Sen's name was spelt by the British for whom he was a close ally) came to be considered as a reincarnation of Chaitanya by his followers.
If Brahmo movement, which swept Bengal as an intellectual, philosophical, social, religious and above all as an emotional current, was deriving from Vaishnavism, then Shaktos did not waste any time in striking back. Ramkrishna Paramhansa and his disciple Vivekananda revived Hinduism's Shakto cult once more.
Gradually Brahmoism receded, subsided and retreated on the face of a resurgent Hinduism. What Vivekananda did was in no way a single handed revolution. Shakto cult runs historically deeper in the Bengali mind than any other faith (in spite of Chaitanya's remarkable achievement, Vaishnavism comes second to Shakto cult), so this resurgence was made on a favourable base.
Now, I would come to another aspect of these changes, together which seem to be the only constant thing in Bengal's history. Bengali Hindus were a close associate of the British in the conspiracy against Siraj, the last free (but illegitimate, since self-proclaimed) Nawab of Bengal. In fact, Durga Puja, worship of Goddess Durga (now the biggest annual festival of Bengali Hindus), was started in 1757 to commemorate the fall of Siraj by Raja Krishnachandra of Nadia and Raja Nabakrishna of Kolkata at their respective places.
Bengalis came to form the comprador class in Imperial India. By 1857 Bengalis were so ubiquitous as lawyers, clerks, deputy collectors, doctors and teachers in British administration, that it was said about the mutinous Sepoys that at any given place, after they were done with the British, they turned their ire against the Bengalis.
Such close loyalties to the British, and again we did another volte-face. Bengali upper caste Hindus, commonly known as the baboo or Bhadralok (literally meaning gentleman) rebelled against the British in such an unprecedented manner in just 20-30 years from 1857 that the British panicked and divided Bengal. Not only at the administrative level. Also at the social and religious level. As a revenge, Bengalis turned Bengali nationalism into a pan-Indian force and metamorphosed it into an Indian nationalism. We taught Vande Mataram to the rest of India.
The moment the upper caste Hindus were turning against the British, it was also a moment when their past nemesis would come chasing after them. This is how the biggest tragedy of Bengal's history would eventually happen. The British would reach out for new allies, Bengali Muslims and the lower/oppressed castes among Bengali Hindus. Bhadraloks had a very simple-minded approach, they thought that they had to drive out the British, and once the country was free, everything would fall in place. In any case they were not able to understand the problems which were inherent in the Bengali society. Historically it would prove to be their fatal flaw. Partition of Bengal in 1905 was finally revoked by the British in 1911, while simultaneously shifting the capital from Calcutta to Delhi (Bengali Hindu was no longer a safe species to be cohabited with). However, Rasbehari Bose and Basanta Biswas came chasing after the British rulers from Bengal and hurled an odd bomb or two on them at Chandni Chowk at the inaugural ceremony of the new capital in the august presence of the emperor of Great Britain King George.
Interestingly, the revival of Hinduism (that was preceded by the Brahmos who were by and large British collaborators, with one notable exception of Shibnath Shastry) in late nineteenth century Bengal and the Calcutta-centric limited Renaissance, Reformation and Enlightenment merged together in an amazing synthesis to compose the nationalistic fervour of the Bengali Bhadralok. These two apparently antithetical currents together contributed to the stauch anti-imperial feeling against the British.
But, to draw an analogy, just like today's left liberal is pitifully, crudely illiterate when it comes to nationality, religion and and caste, our freedom fighters too were colour blind to the plight of Muslims and the oppressed castes among the Hindus. Tagore novel Ghare Baire (The Home and the World), made into a film by Satyajit Ray, beautifully illustrates the birth of this tragedy, which will culminate in another (this time inevitable and final) partition of Bengal, in 1947. In all fairness, it too must be admitted that while the upper caste Hindus were busy fighting for freedom, the Muslim and Scheduled Castes' organizations were busy currying favours with the British! But then the disinherited and the alienated cannot be simply blamed.
However, the Bengali Dalits paid in their blood for their lack of farsightedness, they paid tremendously for siding with Muslim League. The tragedy of partition was in fact the tragedy of the lower caste Hindus who bore the rbunt of it.
Another change was now in the offing. A cultural nationalist politics of Swadeshi that was once pivotal in Bengal's freedom movement now started to give way to what retrospectively we might call a classic Stalinist left politics, from the 1940s. Though Congress would continue to rule Bengal for some more time, the intellectual hegemony would rest effectively with the left from 1940s and 1950s. Suddenly, from the 1950s onwards, educated Bengali Hindus are no longer comfortable in discussing their identities, religion and caste; whereas in the three immediately preceding decades they were into a vigorous identity politics of cultural nationalism, jostling for space in a severe competition with two newly emergent forces which formed a victorious alliance against them, Dalits and Muslims, in an overall communally vitiated atmosphere.
With left politics, Caste Hindus of Bengal begin to feel a bit unsure about what is to be done with the fact that they are Bengali and Hindu. They wanted to wish these identities away. They still remained, no doubt, Hindu Bengalis. But discussions and analyses are barred. Deeply swept away by a newfound brand of Marxism, henceforth Bengali Bhadraloks will give birth to a peculiar chimera of a left politics. Dalits will be still at the margins. Or they wil b worse, when lower caste refugees will be butchered by a joint operation by CPM cadres and police following a direct command of Jyoti Basu immediately after the first Left Front Government assumes power. Muslims will continue to be treated as votebanks, large scale infiltration will be encouraged from Bangladesh (for economic reasons Bangladeshi Muslims come to India, like Mexicans come to US). In 1947, after the partition, 9% of West Bengal's population were Muslim, today it is 25%, unofficial figures cite it is close to 30%. Such drastic demographic changes happened because of massive infiltrations. But there will b pathetic education levels and near-zero empowerments for them, Bangladeshi infiltrators and Indians alike.
And suddenly we shall see a Hindu fundamentalist politics to rear its ugly head in memorable time. Throughout the 1990s, India in general suffered from Hindutva politics of BJP, and they tried to make inroads to Bengal as well. So, 45 years after Syamaprasad Mukherjee, Bengal had two Hindutva politicians representing it at Govt of India as Ministers of State (Tapan Shikdar and Satyabrata Mukherjee). Both of them became MPs from two long-held left bastions. This change was, however, short lived. As if in a classic illustration of Marx's opium of the people analysis, the Hindu refugees from Bangladesh realized that BJP had nothing to offer them which might heal their wounds. Voting for that party was an imaginary solution for their loss of homeland and an illusory redressal of their wounds inflicted by Islamic fundamentalists who tortured and drove them away from Bangladesh. Once exercised, its vacuity was painfully exposed. As a result, BJP became microscopic in Bengal once more. CPM had no role to play here apart from that of a spectator, since it grossly and crudely lacks the analytical language that can allow it to understand history, identity, society, culture, caste and religion.
Bengal's changes have always been very fervent in nature. And contrary to what my friend said, I find the Bengalis to be quite loyal. Yes, they change their ideological courses from time to time as they renew and reinvent their identities in that process, but they remain relatively committed to some principles throughout that process in a pretty steadfast manner. Needless to say, this zig-zag course of Bengalis in history amply frustrates the triumphalism of bourgeis liberal rationalists, who want to reduce human history to a unilinear motion of progress.
May be in future I would like to deliberate on the next change that is now impending in Bengal. That is a history in making.
“Yaar, these days it has become so difficult for a Bengali to get into Delhi University”, a friend of mine from academia (who was by the way not a Bengali) was telling me, “and you know why? Because Bengalis are not loyal, you don't expect a Bengali to be a chamcha. But it is necessary to be loyal to some bigwigs if you want to get into the academic profession, or get promoted within it.”
I silently nodded in approval. I understood this to be a back-handed compliment. Why on earth disagree with someone who was saying a word or two in favour of the poor Bengalis in these rather tough and tight times? However, I wanted to add something of a silver lining to the otherwise bleak prospect of the Bengalis, so I pointed out “but then there are two disciplines, Economics and English where the bigwigs don't always get sufficient number of eligible candidates who are loyal too, so a Bengali can still get into academia without any loyalty provided he is from these two disciplines.”
That friend of mine gave a sardonic laughter. “things... not so easy, my dear. Academics in our country always suffer from too much of interference from powerful people.”
I gave him the example of Vivekananda. There was a time when he was Narendranath Dutta, and he badly needed a schoolteacher's job. But couldn't get any since he was not a Brahmo, and almost all the schools were run by the Brahmos at that point of time. Eventually got a job at Vidyasagar's school, but then lost it as he failed to curry favours with Vidyasagar's son-in-law who was the boss of the school. We mutually agreed that loyalty problem existed in academia since time immemorial.
However, as we were drawing near the place where he would get down (the conversation took place inside an auto rickshaw), I asked him a politically correct question: “don't you think this is kind of stereotyping, grand narrative and all? I mean, why, even a Bengali can be a chamcha like anyone else”. He chuckled, “then he will be isolated from the fellow-Bengalis, your people will mock him”, and got down.
Stereotyping is a culturally incorrect act. But as Terry Eagleton points out, it would be highly unnatural and unusual if a certain people after sharing a common habitat and history for a thousand years don't come to share some mutual characteristics as well.
Perhaps he was right. Bengalis are more comfortable in playing the rebel than playing a conformist. I started looking at this idea from different angles. It is not as if we are never loyal or committed to anything, but it is indeed true that we are less likely to remain loyal for long to any faith or tradition or boss. A land where water, foodgrains fruits and fish were abundant, one's survival did not depend much on loyalty and allegiance, since such multitudinous resources could not possibly be controlled by any singular authority. And I am not giving any value judgments. Its just that Bengalis like to take unprecedented steps once in a while. They are not afraid if that violently disrupts their long-lasting constancy to something. But hang on, am I carried away in my theorization by the recent climate of political change in Bengal?
That brought to my mind this question: is there any pattern to be drawn from history of Bengal, based on loyalty and disloyalty?
A cursory glance at the history of Bengal indeed revealed some startlingly pendular movements, a baffling dialectics of periodic 180 degree changes, a series of volte-faces we made throughout our history. Our origin was Dravidian and Austric. Initially this region had five kingdoms as the Puranas say: Anga, Vanga, Kalinga, Poundra and Suhma. These names are indicative of a Dravidian lineage and an Austric etymology. For details one has to see Nihar Ranjan Ray. Then We had the Aryans. Some historians say that the Alpine Aryans came to Bengal and some other parts of India, who were non-Vedic. So, you get your first conflicts, Nordic vs. Alpine, or Aryan vs Dravidian, or many other permutations and combinations of Aryan (Nordic vs Alpine) Vs Dravidian vs. Austric.
The first organized religion to which Bengal was exposed was not Sanatan Dharma (the Brahminical, Vedic religion), but Buddhism. Entire eastern India turned Buddhist, in fact. By all probability very few Nordic (who were Vedic Aryans) settlers might have been there in Bengal to put up any effective resistance against this egalitarian, anti-Vedic, Godless religion that effectively demolished the Brahminical hegemony and whose effects would last for more than next thousand years.
Then, the first king of any recorded historical significance who rises from Bengal, King Shoshanko, who controls and dominates a large part of North India and is an arch-rival of Harshavardhan, is a Brahmin. He is staunch anti-Buddhist, a follower of lord Shiva, and he is infamous for destroying the Bodhi tree at Bodhgaya (the tree beneath which Buddha attained enlightenment). Some descriptions about his physical features (for instance, he had red hair) indicate that he might have been a Nordic!
Then the next significant historical change in Bengal is the ascension of Pal dynasty. They were Buddhist. Their first King, Gopal, was chosen democratically by an assembly of feudal lords of Bengal. They rule us uninterruptedly for next four hundred years, which is no meagre achievement, in fact very few dynasties of the world have that kind of record till date. And it is commonly agreed that the Bengali people were formed during this period, that our first literature the Charyapada hymns were written during this period (9th century AD) and that they have been the dearest to the Bengalis among the history's hall of fame and as it is pointed out by Nihar Ranjan Ray, Bengali farmer girls still sing of King Mohipal while beating the chaff from the rice grain. There is a proverbial saying 'Dhan Bhangte Mohipaler Geet' (singing of Mohipal while making rice from paddy ).
Curiously, there is another proverb which comes to my mind, 'Dhan Bhangte Shiber Geet' (singing of Lord Shiva while making rice from paddy) which refers to anything incongruous and out of place. I personally believe that the latter proverb indicates that there must have been an attempt in some period to replace Mohipal's song with one devoted to lord Shiva which didn't go well with the public. It refers to the long battle between Buddhism and Sanatan Dharma fought on the terrains of Bengal.
And this brings us to the next volte-face Bengal would take, with the the coming of the Sen dynasty. They were going to implement a dogmatic Sanatan Dharma, which will have the Varna hierarchy, something Bengal didn't have till date, and in order to be able to do that, they brought Brahmins from North India. Their first kings were followers of Shiva. Already some centuries elapsed after the great Shankaracharya's re-establishment of Shaivaite Hindusim in the rest of India, so we can say that Bengal's turn to Sanatan Dharma was an eventuality. Besides, at its fag end, Buddhism was no longer a proto-communistic kind of thing. It was full of Tantra and black magic and esoteric sexual/fertility cults (what would be theorized as Vajrayana), and probably the legendary North Indian identification of Bengal with black magic began from this period. Under such circumstances, probably the Brahminical hierarchy looked more neat and clean than the occult practices.
Since Bengal did not have the usual Varna hierarchy, so all the different profession-based classes from the Buddhist past were blanket-accommodated under the category of Shudra. Even today, Bengal has got only Brahmins and Shudras, and no other Varnas. Bengali Baidyas are considered to be Shudras which is baffling, because Baidyas are said to be Brahmins (Baidya-Brahmin), they wear sacred threads, give their name as Sharma during all rituals, and all traditions of antiquity place them at the zenith of Brahminical hierarchy. According to Sanskritic tradition, a Brahmin who studies one Veda is a Pathak, who studies two Vedas is Dwivedi, Trivedi who studies three and Chaturvedi who studies four. One who studies Ayurveda after reading all the four Vedas is a Vaidya. How come they belong to Shudras? It can possibly be explained with the hypothesis that they were Buddhists to agreed to be a part of Brahminical resurgence.
The last Sen who was to rule entire Bengal (his descendants continued to rule parts of eastern Bengal for next two hundred years) was Lokkhon Sen. He, unlike his father and grandfather, turned to Vaishnavism. So probably, Sanatan Dharma's age old fight between the two gods, Shiva and Vishnu was to be reenacted once more on this newfound terrain of Bengal. But before there could have been any decisive outcome in this incipient struggle, Bengal was occupied by Bakhtiyar Khilji.
Islam came to Bengal in a major way. Prior to this, only some sailors from some navigating people of (mostly) Eastern Bengali origin took to Islam, since Islam now had a control over sea trade.
A lot of Buddists turned to Islam. A lot of Shudras did the same. And though a lot of them were forced, but not all conversions were done forcibly.
Political core of Bengal would be controlled by Pathans and Mughals for more than next 500 years. But during this period Hinduism would have the following evolution. Tantric cults from Vajrayana Buddhism would merge with Shaivaite cults of Sanatan Dharma, and give birth to one major school of Bengali Hinduism, namely, Shakto (worship of Shakti). The marriage of Durga and Shiva symbolically signifies this merger.
The other major (and rival) school was that of of Vaishnavism (reinvigorated after incorporation of Buddha into its pantheon as the ninth avatar of Vishnu), which though existed throughout Sanatan Dharma's history for thousands of years, but which now would be reborn in a radically new manner owing to the influence of Bhakti movement of the medieval age. Chaitanya would be the prophet of this newly born Boishnob movement. Many consider his movement to be a regeneration of Buddha's principles of equality and community erected on a base of devotion (Bhakti). If Shakto cult draws from Vajrayana Buddhism, Boishnob cult probably draws from classical Buddhism to some extent.
Shakto was the dominant cult among Bengali Hindus. Chaitanya was therefore the agent of change, he was the challenger. But Shaktos periodically used to attack his followers, they were violent (violence was prohibited for Vaishnavs following the Bhakti movement, whereas Shaktos had liberal recourse to violence as bloodshed was no sin in their cult) and that's one of the reasons why he had to leave Nabadwip (his hometown) finally. Of course the main reason was the threat posed by the Muslim ruler of Bengal.
Shakto remains the dominant cult among Bengali Hindus till date, and wherever Bengali Hindus go, they will build a Kalibari (abode of Kali). Till date these two cults, signified by their ruling deities Kali and Krishna respectively, are the two biggest currents of faith among Bengali Hindus.
The next curtain can be raised when Bengal is under British occupation. A society drowned neck deep in the violent orgies of Tantric cults, human sacrifices in front of Goddess Kali, and burning of Sati (wives' immolation at their husbands' pyre) will produce two great challengers of established religion: Raja Ram Mohan Roy and Vidyasagar. In Ram Mohan's project, there will be a social reformation that would like to return to the roots of Vedic religion, i.e. Sanatan Dharma. Brahmoism subsequently would be formed as a religious, social and cultural movement.
In a word, Brahmos opposed and challenged the very evolution of different religious currents in Bengal for last thousands of years. Naturally it was difficult for them to have a practical and performative dimension for their newfound religion, so they liberally borrowed from the Vaishnav practices of communal (some left-liberals have made this word a cliched signfier for religious fundamentalism, but communal is after all an adjective derived from the word community) songs and music, procession and dance, sentimental piety etc. In fact, one Brahmo leader Keshub Chunder Sen (that's how Keshob Chondro Sen's name was spelt by the British for whom he was a close ally) came to be considered as a reincarnation of Chaitanya by his followers.
If Brahmo movement, which swept Bengal as an intellectual, philosophical, social, religious and above all as an emotional current, was deriving from Vaishnavism, then Shaktos did not waste any time in striking back. Ramkrishna Paramhansa and his disciple Vivekananda revived Hinduism's Shakto cult once more.
Gradually Brahmoism receded, subsided and retreated on the face of a resurgent Hinduism. What Vivekananda did was in no way a single handed revolution. Shakto cult runs historically deeper in the Bengali mind than any other faith (in spite of Chaitanya's remarkable achievement, Vaishnavism comes second to Shakto cult), so this resurgence was made on a favourable base.
Now, I would come to another aspect of these changes, together which seem to be the only constant thing in Bengal's history. Bengali Hindus were a close associate of the British in the conspiracy against Siraj, the last free (but illegitimate, since self-proclaimed) Nawab of Bengal. In fact, Durga Puja, worship of Goddess Durga (now the biggest annual festival of Bengali Hindus), was started in 1757 to commemorate the fall of Siraj by Raja Krishnachandra of Nadia and Raja Nabakrishna of Kolkata at their respective places.
Bengalis came to form the comprador class in Imperial India. By 1857 Bengalis were so ubiquitous as lawyers, clerks, deputy collectors, doctors and teachers in British administration, that it was said about the mutinous Sepoys that at any given place, after they were done with the British, they turned their ire against the Bengalis.
Such close loyalties to the British, and again we did another volte-face. Bengali upper caste Hindus, commonly known as the baboo or Bhadralok (literally meaning gentleman) rebelled against the British in such an unprecedented manner in just 20-30 years from 1857 that the British panicked and divided Bengal. Not only at the administrative level. Also at the social and religious level. As a revenge, Bengalis turned Bengali nationalism into a pan-Indian force and metamorphosed it into an Indian nationalism. We taught Vande Mataram to the rest of India.
The moment the upper caste Hindus were turning against the British, it was also a moment when their past nemesis would come chasing after them. This is how the biggest tragedy of Bengal's history would eventually happen. The British would reach out for new allies, Bengali Muslims and the lower/oppressed castes among Bengali Hindus. Bhadraloks had a very simple-minded approach, they thought that they had to drive out the British, and once the country was free, everything would fall in place. In any case they were not able to understand the problems which were inherent in the Bengali society. Historically it would prove to be their fatal flaw. Partition of Bengal in 1905 was finally revoked by the British in 1911, while simultaneously shifting the capital from Calcutta to Delhi (Bengali Hindu was no longer a safe species to be cohabited with). However, Rasbehari Bose and Basanta Biswas came chasing after the British rulers from Bengal and hurled an odd bomb or two on them at Chandni Chowk at the inaugural ceremony of the new capital in the august presence of the emperor of Great Britain King George.
Interestingly, the revival of Hinduism (that was preceded by the Brahmos who were by and large British collaborators, with one notable exception of Shibnath Shastry) in late nineteenth century Bengal and the Calcutta-centric limited Renaissance, Reformation and Enlightenment merged together in an amazing synthesis to compose the nationalistic fervour of the Bengali Bhadralok. These two apparently antithetical currents together contributed to the stauch anti-imperial feeling against the British.
But, to draw an analogy, just like today's left liberal is pitifully, crudely illiterate when it comes to nationality, religion and and caste, our freedom fighters too were colour blind to the plight of Muslims and the oppressed castes among the Hindus. Tagore novel Ghare Baire (The Home and the World), made into a film by Satyajit Ray, beautifully illustrates the birth of this tragedy, which will culminate in another (this time inevitable and final) partition of Bengal, in 1947. In all fairness, it too must be admitted that while the upper caste Hindus were busy fighting for freedom, the Muslim and Scheduled Castes' organizations were busy currying favours with the British! But then the disinherited and the alienated cannot be simply blamed.
However, the Bengali Dalits paid in their blood for their lack of farsightedness, they paid tremendously for siding with Muslim League. The tragedy of partition was in fact the tragedy of the lower caste Hindus who bore the rbunt of it.
Another change was now in the offing. A cultural nationalist politics of Swadeshi that was once pivotal in Bengal's freedom movement now started to give way to what retrospectively we might call a classic Stalinist left politics, from the 1940s. Though Congress would continue to rule Bengal for some more time, the intellectual hegemony would rest effectively with the left from 1940s and 1950s. Suddenly, from the 1950s onwards, educated Bengali Hindus are no longer comfortable in discussing their identities, religion and caste; whereas in the three immediately preceding decades they were into a vigorous identity politics of cultural nationalism, jostling for space in a severe competition with two newly emergent forces which formed a victorious alliance against them, Dalits and Muslims, in an overall communally vitiated atmosphere.
With left politics, Caste Hindus of Bengal begin to feel a bit unsure about what is to be done with the fact that they are Bengali and Hindu. They wanted to wish these identities away. They still remained, no doubt, Hindu Bengalis. But discussions and analyses are barred. Deeply swept away by a newfound brand of Marxism, henceforth Bengali Bhadraloks will give birth to a peculiar chimera of a left politics. Dalits will be still at the margins. Or they wil b worse, when lower caste refugees will be butchered by a joint operation by CPM cadres and police following a direct command of Jyoti Basu immediately after the first Left Front Government assumes power. Muslims will continue to be treated as votebanks, large scale infiltration will be encouraged from Bangladesh (for economic reasons Bangladeshi Muslims come to India, like Mexicans come to US). In 1947, after the partition, 9% of West Bengal's population were Muslim, today it is 25%, unofficial figures cite it is close to 30%. Such drastic demographic changes happened because of massive infiltrations. But there will b pathetic education levels and near-zero empowerments for them, Bangladeshi infiltrators and Indians alike.
And suddenly we shall see a Hindu fundamentalist politics to rear its ugly head in memorable time. Throughout the 1990s, India in general suffered from Hindutva politics of BJP, and they tried to make inroads to Bengal as well. So, 45 years after Syamaprasad Mukherjee, Bengal had two Hindutva politicians representing it at Govt of India as Ministers of State (Tapan Shikdar and Satyabrata Mukherjee). Both of them became MPs from two long-held left bastions. This change was, however, short lived. As if in a classic illustration of Marx's opium of the people analysis, the Hindu refugees from Bangladesh realized that BJP had nothing to offer them which might heal their wounds. Voting for that party was an imaginary solution for their loss of homeland and an illusory redressal of their wounds inflicted by Islamic fundamentalists who tortured and drove them away from Bangladesh. Once exercised, its vacuity was painfully exposed. As a result, BJP became microscopic in Bengal once more. CPM had no role to play here apart from that of a spectator, since it grossly and crudely lacks the analytical language that can allow it to understand history, identity, society, culture, caste and religion.
Bengal's changes have always been very fervent in nature. And contrary to what my friend said, I find the Bengalis to be quite loyal. Yes, they change their ideological courses from time to time as they renew and reinvent their identities in that process, but they remain relatively committed to some principles throughout that process in a pretty steadfast manner. Needless to say, this zig-zag course of Bengalis in history amply frustrates the triumphalism of bourgeis liberal rationalists, who want to reduce human history to a unilinear motion of progress.
May be in future I would like to deliberate on the next change that is now impending in Bengal. That is a history in making.
Sunday, September 19, 2010
A Chance Encounter
A Brief Meeting: A Chance Encounter
There was this person whom i met only once. It was a chance encounter. I was in high school then.
1994. Summer vacation. I was at my aunt's place. It was a lazy afternoon. Barring me, a cousin brother, and two elderly ladies were there. The latter were having siesta. We two were discussing rather seriously about the respective girls we were in love with.
The calling bell rang. We went downstairs. We saw a young man. I didn't know him. My cousin did. He said, hey, it's you, ...da! (I don't remember the name he took. Henceforth I would refer to this young man as Nemo) Your rehearsal would start at five. No one is here yet.
My aunt and her husband (my mesho, as we call in Bengali) were involved in group theatre. Their house was the official address of their group. And all rehearsals were held there. So Nemo belonged to the theatre group, I understood.
He nodded. Yes, I know. Had nothing to do and nowhere to go, so thought of coming here a bit early.
Nemo was five feet ten or eleven, heavy in built, dark complexioned, and looked like either a college student, or fresh out of college.
We led him to the room where we two were seated earlier. We sat together.
He looked at me. Said in Bengali, I think I have heard about you. Aren't you the boy who reads Probir Ghosh?
Probir Ghosh was a familiar name to me. He was the chief of Rationalists' Association, and wrote a series of books called Oloukik Noy, Loukik (Not Supernatural, Natural).
I asked, is reading Probir Ghosh a kind of occupation?
Nemo smiled embarrassedly. I mean you read Probir Ghosh, right?
I said, yes. Among other books.
What is your idea about Probir, Nemo asked.
Well, I follow him closely. I consider myself a rationalist.
So, you are an atheist.
Yes.
So you want to take away religion from people's lives?
Yes, why not? That's superstition, right? I mean all religions are superstitions.
No doubt. But why do people invent them?
Well, in ancient times, they didn't understand the world around them, so they invented God.
And why is God still there when we understand the world?
Probably most people following religion still don't understand the world around them.
I agree. Then they still need God. The people who still don't understand the world.
I didn't understand this time what he wanted to say. I asked him to elaborate.
See, kerosene lamps are primitive. They are bad for health too. They go back to a time when people knew lesser science. So you want to take the kerosene lamps away. But you must provide that person with electricity, or some other better equivalent of a lamp.
I was taken aback. No one spoke like that before. I knew atheists who were dogmatic God-haters and religion-haters and who hated anything that was not rational and logical (My English teacher, who was a local leader of Rationalists' Association once demanded that the local book fair should not have ghost stories and supernatural books for children as they spoil the young minds. He didn't demand a ban on religious books since that would not be possible. Children could be policed, for the adults it's a tad difficult. However the local CPM leaders who ran the fair rather 'irrationally' turned this demand down). On the other hand I had people who were God-fearing. They disliked atheists. What he was saying was new to me. That before taking away religion, we have its replacement at hand. New indeed.
He added, and don't think religion was just about explaining nature, world, universe. It was also a way of life. It still is. Something we call ethics. Religion tried to answer some basic questions about existence. Stuff like philosophy. See, a human being needs some faith in life. Those who are well-read, can afford to do without it. They will probably take culture and knowledge as religion substitute. Those extremely poor or extremely rich can do in life without values as well. The But most common people cannot lead their lives without some sense of well-being. They derive it from religion, or God, or spirituality. Give it a thought.
The time for rehearsal was drawing near. People started appearing. The calling bell rang frequently. My cousin brother went downstairs.
He got up. Nice meeting you. Remember, an equivalent of religion has to made. The onus lies on atheists. Instead of abusing people's faith, engage with that. Try to see what can replace religion for the ordinary men and women. Without studying religion that won't happen. And don't consider rationality to be supreme. Give some consideration to human feelings. Desires and wounds which part of our existence. See if you are able to address them. Reason does not address them, but religion does. May be in opium-like manner, but still does.
I wasn't able to talk to him again. I saw him a couple of times during the times of a few theatrical productions of my aunt's group. Once or twice I met him at the green room or backstage, and he always beamed and waved. Later he left the group I guess.
But he has been an instrumental influence on me. Within just, say, 30 minutes, what he taught me, I guess, professors are not able to teach in entire semesters. And he was not any big person. He was just a young man, if not a college student, then, by all likelihood, unemployed. There is a saying, one swallow does not make a spring. If Kolkata is culturally and intellectually vibrant, its not only because of a few great personalities we produced intermittently. It is because of innumerable intellectuals you can meet in this city, here and there, upon chance encounters.
What he talked of was taken up by Terry Eagleton in Ideology of the Aesthetic (1990) as logic vs. aesthetic conflict, but of course I don't think he read Eagleton.
I remember him, as one of the finest teachers I have ever had. And today when I look back, a very strange coincidence attracts my attention. 1994 was the year when Nabarun Bhattachary'a Herbert was to be awarded Sahitya Academy award. Herbert takes up these very issues. But then Herbert would require a separate discussion.
N.B. Those who are interested may read my note 'Quo Vadis Bengal', where I argue that Bengal's recent political change is about choosing aesthetic over logic.
There was this person whom i met only once. It was a chance encounter. I was in high school then.
1994. Summer vacation. I was at my aunt's place. It was a lazy afternoon. Barring me, a cousin brother, and two elderly ladies were there. The latter were having siesta. We two were discussing rather seriously about the respective girls we were in love with.
The calling bell rang. We went downstairs. We saw a young man. I didn't know him. My cousin did. He said, hey, it's you, ...da! (I don't remember the name he took. Henceforth I would refer to this young man as Nemo) Your rehearsal would start at five. No one is here yet.
My aunt and her husband (my mesho, as we call in Bengali) were involved in group theatre. Their house was the official address of their group. And all rehearsals were held there. So Nemo belonged to the theatre group, I understood.
He nodded. Yes, I know. Had nothing to do and nowhere to go, so thought of coming here a bit early.
Nemo was five feet ten or eleven, heavy in built, dark complexioned, and looked like either a college student, or fresh out of college.
We led him to the room where we two were seated earlier. We sat together.
He looked at me. Said in Bengali, I think I have heard about you. Aren't you the boy who reads Probir Ghosh?
Probir Ghosh was a familiar name to me. He was the chief of Rationalists' Association, and wrote a series of books called Oloukik Noy, Loukik (Not Supernatural, Natural).
I asked, is reading Probir Ghosh a kind of occupation?
Nemo smiled embarrassedly. I mean you read Probir Ghosh, right?
I said, yes. Among other books.
What is your idea about Probir, Nemo asked.
Well, I follow him closely. I consider myself a rationalist.
So, you are an atheist.
Yes.
So you want to take away religion from people's lives?
Yes, why not? That's superstition, right? I mean all religions are superstitions.
No doubt. But why do people invent them?
Well, in ancient times, they didn't understand the world around them, so they invented God.
And why is God still there when we understand the world?
Probably most people following religion still don't understand the world around them.
I agree. Then they still need God. The people who still don't understand the world.
I didn't understand this time what he wanted to say. I asked him to elaborate.
See, kerosene lamps are primitive. They are bad for health too. They go back to a time when people knew lesser science. So you want to take the kerosene lamps away. But you must provide that person with electricity, or some other better equivalent of a lamp.
I was taken aback. No one spoke like that before. I knew atheists who were dogmatic God-haters and religion-haters and who hated anything that was not rational and logical (My English teacher, who was a local leader of Rationalists' Association once demanded that the local book fair should not have ghost stories and supernatural books for children as they spoil the young minds. He didn't demand a ban on religious books since that would not be possible. Children could be policed, for the adults it's a tad difficult. However the local CPM leaders who ran the fair rather 'irrationally' turned this demand down). On the other hand I had people who were God-fearing. They disliked atheists. What he was saying was new to me. That before taking away religion, we have its replacement at hand. New indeed.
He added, and don't think religion was just about explaining nature, world, universe. It was also a way of life. It still is. Something we call ethics. Religion tried to answer some basic questions about existence. Stuff like philosophy. See, a human being needs some faith in life. Those who are well-read, can afford to do without it. They will probably take culture and knowledge as religion substitute. Those extremely poor or extremely rich can do in life without values as well. The But most common people cannot lead their lives without some sense of well-being. They derive it from religion, or God, or spirituality. Give it a thought.
The time for rehearsal was drawing near. People started appearing. The calling bell rang frequently. My cousin brother went downstairs.
He got up. Nice meeting you. Remember, an equivalent of religion has to made. The onus lies on atheists. Instead of abusing people's faith, engage with that. Try to see what can replace religion for the ordinary men and women. Without studying religion that won't happen. And don't consider rationality to be supreme. Give some consideration to human feelings. Desires and wounds which part of our existence. See if you are able to address them. Reason does not address them, but religion does. May be in opium-like manner, but still does.
I wasn't able to talk to him again. I saw him a couple of times during the times of a few theatrical productions of my aunt's group. Once or twice I met him at the green room or backstage, and he always beamed and waved. Later he left the group I guess.
But he has been an instrumental influence on me. Within just, say, 30 minutes, what he taught me, I guess, professors are not able to teach in entire semesters. And he was not any big person. He was just a young man, if not a college student, then, by all likelihood, unemployed. There is a saying, one swallow does not make a spring. If Kolkata is culturally and intellectually vibrant, its not only because of a few great personalities we produced intermittently. It is because of innumerable intellectuals you can meet in this city, here and there, upon chance encounters.
What he talked of was taken up by Terry Eagleton in Ideology of the Aesthetic (1990) as logic vs. aesthetic conflict, but of course I don't think he read Eagleton.
I remember him, as one of the finest teachers I have ever had. And today when I look back, a very strange coincidence attracts my attention. 1994 was the year when Nabarun Bhattachary'a Herbert was to be awarded Sahitya Academy award. Herbert takes up these very issues. But then Herbert would require a separate discussion.
N.B. Those who are interested may read my note 'Quo Vadis Bengal', where I argue that Bengal's recent political change is about choosing aesthetic over logic.
Tuesday, September 7, 2010
পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি জাতীয়তাবাদ
চার
As industrialism gradually undermined religious values, along with their ideological power, it proved necessary to find a substitute for this most astonishingly successful of all symbolic systems; and from the Romantics onwards, it was known as culture. Most aesthetic concepts are theological ideas in disguise. Hence the religious, pseudo-transcendent language in which art has so often been discussed in these distinctly non-transcendent modern times.
Terry Eagleton , The New Statesman, 20 June 2005
পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি জাতীয়তাবাদের raison d'etre কিন্তু আমি এখনও দেখাইনি। ওটা সাসপেন্স ভেবে নিন, যাতে পাঠক লেখার শেষ পর্যন্ত পড়তে বাধ্য হন। এও ভাবতে পারেন যে অনেকগুলি কথা আগে না বললে ও কথায় পৌঁছনো যাবে না। সলতে পাকানো এখনও শেষ হয়নি তো।
বাঙালি বর্ণহিন্দু দুয়েকবার মোঘল-পাঠানের সঙ্গে টক্কর দিলেও মোটের ওপর অনুগত ছিল। এরপর বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজকে সরিয়ে ইংরেজের ক্ষমতায় আসায় বাঙালি বর্ণহিন্দুদের সমাজপতিরা সক্রিয় সমর্থন দেন। এই সময় থেকে পাশ্চাত্যের সঙ্গে আমাদের নৈকট্যের ন্যারেটিভ শুরু। মনে রাখা দরকার যে সিপাহী বিদ্রোহের সময় বিদ্রোহী সেপাইরা ইংরেজ প্যাঁদানোর পরেই বাঙালি প্যাঁদাতেন। উকিল, ডাক্তার, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, শিক্ষক ইত্যাদি সমস্ত পদই বাঙালি বর্ণহিন্দুরা অলঙ্কৃত করে অত্যন্ত সফলভাবে ব্রিটিশদের প্রিয় comprador শ্রেণি হিসেবে উঠে আসে। কিন্তু সিপাহী বিদ্রোহের মাত্র ত্রিশ চল্লিশ বছরের মধ্যেই এই অবস্থার এক আমূল পরিবর্তন ঘটে। কেন ও কিভাবে ঘটে, তা একটা লম্বা গল্প, তবে সংক্ষেপে বললে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ। পাশ্চাত্য শিক্ষা চালু করা হবে, অথচ তার শ্রেষ্ঠ দার্শনিক চিন্তাগুলি থেকে বাঙালি হিন্দু গা বাঁচিয়ে চলবে, এমনটা ভাবা মূর্খামি। তাই স্বরাজের স্পৃহা, আধুনিক জাতীয়তাবাদ, সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতার আদর্শ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নির্ভর ভাষা চেতনা, এমনকি সাংস্কৃতিক প্রতিরোধে ধর্মের পুনর্জাগরণ (রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ) ইত্যাদি বিষয়গুলো অনেকটাই পাশ্চাত্যের সংস্পর্শে এসে তৈরি হওয়া ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। এর আগে আমাদের যে ধর্মীয় রিফর্মেশন আন্দোলন হয়, ব্রাহ্ম আন্দোলন, তা ছিল মূলত ইংরেজ ঘনিষ্ঠ বাঙালি বর্ণহিন্দুর প্রচেষ্টা। তবে সেই কারণে তাকে খাটো করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তাদের সম্পর্কে একথাও বলতে হয় যে শিক্ষিত হিন্দু বাঙালি যুবকদের ক্রিশ্চান হয়ে যাওয়ার প্রবণতা তারা সফলভাবে রোধ করেছিলেন।
এই প্রসঙ্গে না বলে পারছি না যে তথাকথিত ভারতীয় জাতীয়তাবাদ আসলে যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপরে কিঞ্চিত কসমেটিক সার্জারি ঘটিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিল, আমাদের উদারপন্থি ভারতীয়তাবাদি লোকগুলি তা বেমালুম চেপে যান, বা হয়ত খবরই রাখেন না।
একবার দেখেছিলাম রবীন্দ্রনাথের বাংলার মাটি বাংলার জলের বিকৃত হিন্দি অনুবাদ দেখানো হচ্ছে দূরদর্শনের ন্যাশনাল নেটওয়ার্কে , দেশ কি মিট্টি দেশ কি জল! ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশনের বহরটা ভাবুন একবার! এটা ইতিহাসের যে কোনও ছাত্রের কাছে অজানা নয় যে বঙ্কিমের বঙ্গমাতাকেই ভারতমাতা বলে বাজারে ছাড়া হয়েছিল, আর বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ব্যবহৃত স্লোগান বন্দেমাতরম ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের স্লোগান হয়ে ওঠে। স্বদেশি কথাটাই তো বাঙালি জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি। তা একসময় ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াইতে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রয়োজন হয়েছিল যখন, তখন উত্তর ও দক্ষিণ ভারতীয়রা বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে ধার নিয়েছেন, বেশ করেছেন। কিন্তু আজ যদি সেই ভারতীয় জাতীয়তার দোহাই দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়, তা ইতিহাসবিরুদ্ধ, এবং তা মোটেই সহ্য করা যায় না।
মজার ব্যাপার হচ্ছে যে যতদিন বাঙালি বর্ণহিন্দু দালালি করেছেন, ততদিন সব ঠিকঠাক চলেছিল। যেই ইংরেজের বিরুদ্ধে গেলাম, সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি মুসলিম ও বাঙালি দলিতদের প্রতি ইংরেজের উস্কানি শুরু হল। বর্ণহিন্দুর দোষ অসীম, কোনও সন্দেহ নেই। একচক্ষু হরিণ। শুধু ইংরেজের আধিপত্যই দেখেছি, নিজের বাঁদরামি দেখিনি, ঘরের কাছে প্রতিবেশি নিম্নবর্ণ কিভাবে বেঁচে আছে, কেয়ার করিনি (রবীন্দ্রনাথের সতর্কবাণী মনে পড়ে)। তাই বর্নহিন্দুর নেতৃত্বে যে স্বাধীনতা সংগ্রাম, তার শেষে দেশভাগই হওয়ার ছিল। ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টিকে কংগ্রেসের সমর্থন না দেওয়া ছিল ইতিহাসের অমোঘ ইঙ্গিত। এরপর বাংলায় মুসলিম লিগের রাজত্ব, বাঙালি হিন্দুদের ওপরে নোয়াখালির মত কুৎসিত জেনোসাইড, এস সি ফেডারেশনের সমর্থনে বাংলাভাগ, যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের পাকিস্তানের আইনমন্ত্রীর পদগ্রহণ ও এরপর তাঁর ট্র্যাজিক জীবন, পূর্ব পাকিস্তান থেকে কয়েক বছরের মধ্যে চার মিলিয়ন হিন্দুর (যার অধিকাংশই নিম্নবর্গীয়, যারা দেশভাগের সময় পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিলেন) উৎখাত হওয়া, এ সবই আমাদের ইতিহাসে থেকে যাবে। উদবাস্তু বাঙালি নমশূদ্রকে কিভাবে জ্যোতির বসুর পার্টি ও পুলিস মরিচঝাঁপিতে গণখুন করেছে, সেটাও দেখতে হবে। ইতিহাসকে কম্বলচাপা না দিয়ে ফিরে পড়ার সৎসাহস দেখানো দরকার।
ভারত একটি বহুজাতিক দেশ। এখানে প্রতিটি জাতিই সেকথা জানে ও বোঝে। শুধু বাম-লিবেরাল বিশ্বমানবিকরা বোঝেন না। দিল্লিতে নিজের প্রদেশের স্বার্থরক্ষা সবাই করেন, শুধু বাঙালি এইসব তুচ্ছ ব্যাপারে মাথা ঘামান না। সবাই নিজের প্রদেশের কর্মপ্রার্থিকে অগ্রাধিকার দেন, শুধু বাঙালিই দেন না। ফলে ভারতে বাঙালির কোনঠাসা হওয়ার এক চমৎকার পরিবেশ বাঙালিই তৈরি করে দেন। একসময় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালিরাই চালাতেন, আজ সেখানে বাঙালির দশা দেখলে সেই টেনিদার কথাটা মনে পড়ে, বাঙালি পাগল না বাঙালির পেট খারাপ বোঝা সত্যি খুব কঠিন।
কিছুদিন আগে, সম্ভবত এ বছরের (২০১০) মার্চ মাসে আনন্দবাজার পত্রিকায় দিল্লিতে বাংলা চর্চার বেহাল দশা নিয়ে একটি প্রতিবেদন বের হয়েছিল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স করার ব্যবস্থা আছে, কিন্তু যেহেতু বাংলা নিয়ে পড়লে প্রায় কোনও ভবিষ্যতই নেই, তাই ছাত্ররা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। প্রবাসী বাঙালিদেরও বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই, এমনকি যে বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলি রয়েছে, তারাও ধুঁকছে। এ জিনিস তামিলদের ব্যাপারে ভাবা যায় না, স্রেফ ভাবা যায় না। হিন্দু বাঙালির পরিচয় সঙ্কটের কারণে, তার উদারতা, বিশ্বজনীনতা ও বামপন্থার কারণে যদি ভারতে বাংলা ভাষা সংস্কৃতির বিসর্জন যাত্রা ঘটে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে, সেক্ষেত্রে আস্তিন গোটানোর সময় এসেছে।
আমাদের এক ফেসবুক বন্ধু, যিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রয়োজনীয়তাই অস্বীকার করেছেন, তিনি আরও একটি মন্তব্য করেনঃ যে বাঙালিরা নিজ ক্ষেত্রে ব্যর্থ তারাই বাকি বাঙালিদের কাছে জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে নিজেদের বাঁচাতে চান, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চান। অর্থাৎ বাঙালি জাতীয়তাবাদ হল অক্ষমের বৃহন্নলা ক্রন্দন। যেহেতু এই মন্তব্য আমার বাঙালি জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত একটি স্টেটাস মেসেজের প্রেক্ষিতে এসেছিল, সন্দেহ হয় তিনি আমাকেই একজন ব্যর্থ বাঙালি ঠাউরেছেন এবং মনে করেছেন যে আমার বোধহয় নিতান্ত ল্যাজেগোবরে অবস্থা, তাই আমি বাকি বাঙালিদের উদ্দেশ্যে আকুল ক্রন্দন করছি, ওগো, আমাকে সাহায্য কর, বাঙালি বাঙালিকে না দেখিলে কে দেখিবে। যেন এমন করলে সেটা অপরাধ হত! এই মন্তব্য হেসে ওড়াবেন না, এই মন্তব্য এক গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। এর মাধ্যমে বিশেষ করে দক্ষিনবঙ্গের, কলকাতা কেন্দ্রিক বাঙালির এক মারাত্মক অসুখ ধরা পড়ে, সে অসুখের নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত বাঙালি জাতীয়তাবাদ পশ্চিমবঙ্গে দাঁড়াতেই পারবে না। কলকাতার বাঙালি ক্ষমতার আরাধনায় (মিশেল ফুকোর পাওয়ার/নলেজ বিন্যাস এখানে খুব জরুরি ধারণা যদি প্রোফেশনাল মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবনধারণ বুঝতে চান) বহু আগে সমব্যথা বিসর্জন দিয়েছে। যদি কোনও দুস্থ বিহারি/তামিল তার জাতের কোনও ক্ষমতাবান ব্যক্তির কাছে সাহায্য চান, তিনি সেটা পাবেন এই সম্ভাবনা নব্বই শতাংশ। যদি কোনও বিপন্ন বাঙালি যুবক বা যুবতী কোনও বয়স্ক বাঙালির কাছে সাহায্য চান, কিছু মুফত জ্ঞান ছাড়া উপহাস পাবেন, কিন্তু কোনও সাহায্য পাবেন না, সে সম্ভাবনা নিরানব্বই দশমিক নয় নয় শতাংশ। আমরা মানুষ চিনি তার প্রতিষ্ঠা দিয়ে, এবং প্রতিষ্ঠা মানে অবশ্যই চাকরি, এবং প্রতিষ্ঠা মানে সংগ্রামরত মানুষ নয়, ক্ষমতার দালালি করে জুড়িগাড়ি হাঁকানো মানুষ। এবং যেহেতু বাঙালি আর্থিক দিক দিয়ে পরনির্ভর, পরজীবি, সে অন্যের প্রতিষ্ঠানে ভৃত্যের কাজ করে, তাই সে প্রতিষ্ঠা নিয়ে ম্যানিয়ায় ভোগে। সে ব্যর্থ মানুষের প্রতি সমব্যথা দেখায় না, আর দালালের স্বাজাত্যবোধ থাকলে তো সূর্য পশ্চিমে উঠবে। বাঙালির হিন্দি ইংরেজির প্রতি মুক্তকচ্ছ হওয়ার প্রধান কারণও এই, এ দুটি জানলে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়, সে বুঝেছে। বাংলা ক্ষমতার ভাষা নয়, কাজেই সেটা শেখার কি প্রয়োজন!
যতক্ষণ তুমি ব্যর্থ, তুমি মানুষই নও। যেই তুমি বড়রকম সাফল্য পেলে, তুমি আগমার্কা আনন্দবাজার ছাপের সেরা বাঙালি, সে তুমি বাংলা ও বাঙালি সম্পর্কে ছাই জানো আর না জানো! হীরক রাজার দেশে একটা ডায়ালগ ছিল, 'নাম জানো না তো! যার নাম নাই, তার কথার দাম নাই!' বাঙালির সাফল্য ম্যানিয়া, তার সুপারম্যানিয়া (শিব্রাম মস্কো বনাম পন্ডিচেরিতে এই শব্দ কয়েন করেছিলেন, সুপারম্যান নিয়ে বাঙালির যে বিশেষ ম্যানিয়া তাকে ব্যাখ্যা করতে গেলে এই শব্দটি ধার না করে পারা যায় না), বাম-লিবেরালের সুখী complacent বালিগঞ্জ যোধপুর সল্টলেক নিউ টাউন কেন্দ্রিক জীবনচর্চা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পথে প্রধান বাধা। সংগ্রামরত বাঙালি, বিপন্ন বাঙালি, বেকায়দায় পড়া বাঙালির জন্য সমবেদনা না দেখিয়ে, তাকে উৎসাহ না দিয়ে, সাহায্য না করে কেবল তেলা মাথায় তেল দেওয়া নামক যে মহামারী আমাদের সমস্ত ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার মূলে আক্রমণ করছে, তাকে চরম জোরে লাথিয়ে গঙ্গাপার না করালে আমাদের বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাস্তবে পরিণত হবে। এ মহামারীর মূলে আছে মুৎসুদ্দিপনা, সেটা মনে রেখে লাথিটা মারতে হবে।
উল্লেখ করা ভাল, বাঙালি জাতীয়তাবাদের ফলে বাকি ভারতবাসি বা বিশ্ববাসির সঙ্গে কোনও বিভেদ আসার কথা নয়, কারণ একজন ভাল বাঙালি সঙ্গী হিসেবে খুব আকর্ষণীয়, সেটা আপনাকে অন্যভাষীরাই বলে দেবেন। আর পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি জাতীয়তাবাদ এই শিরোনাম নিয়ে একটু বলে রাখি, আমি চাই ভারত রাষ্ট্রে বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাঙালিরা যেন পশ্চিমবঙ্গকে তাদের স্বার্থরক্ষকের ভূমিকায় দেখেন, সমদরদীর ভুমিকায় দেখেন। যিনি এই লেখার শেষ অবধি পড়বেন, তিনি নিশ্চয়ই ভাববেন না যে আমি বহির্বঙ্গের বাঙালিকে চাপা দিয়ে স্রেফ এক কলকাতা কেন্দ্রিক বাঙালিয়ানায় আস্থা রাখি। তবে পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতা আমাদের পীঠস্থান, তার প্রতি কোনও বিদ্বেষ রাখা অনুচিত, বরং সেখানে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন কিভাবে আনা যায়, সেই চেষ্টাই করা ভাল। এও বলি, বাঙালিয়ানার, বাঙালি সংস্কৃতির বিকেন্দ্রীকরণ যে দরকার, সেটা প্রবাসী বাঙালি হয়ে আমি অবশ্যই হাড়ে হাড়ে বুঝি।
কিন্তু বাঙালির ইতিহাস এও সাক্ষ্য দেয়, যে কোনও বিষয়ে আমাদের একমত হওয়া বড় মুশকিল। আমাদের সব বিষয়ে দলাদলি, যার জন্যই আক্ষরিক অর্থে কোনও দলই গড়ে ওঠেনি। বাঙালি জাতীয়তাবাদের এই প্রায়োগিক সমস্যার কোনও সহজ সমাধান হবে না। একটু ইতিহাস ঘেঁটে যদি দেখি, এই কাঁকড়াবৃত্তির কারন খুঁজি, এর সূত্রপাত সেন আমলে। আমাদের সমাজকে বহুভাগে বিভক্ত করে সেনদের বোধকরি শাসনে সুবিধাই হয়েছিল। জমিদারিপ্রথা এল মধ্যযুগে। জাতপাত ও জমিদারিপ্রথার ফলে এই সর্বনাশ ঘটল যে আমাদের সংগঠিত হওয়ার প্যারামিটারগুলি খুবই ক্ষুদ্র থেকে গেল। এবং এই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।
বাঙালি যে স্বপরিচয় নিয়ে স্বস্তিবোধ করে না, তার একটা বড় কারণ সে অন্য উপপরিচয়ে জীবনধারণ করে থাকে। সে অমুকের ঘনিষ্ঠ, সে তমুকের বংশধর, সে অমুক পদবীভূক্ত কুলীন বামুন বা কায়েত, সে সাউথ পয়েন্ট বা ডন বস্কো বা প্রেসিডেন্সি বা সেইন্ট জ়েভিয়ার্সে পড়েছে (আমি দিল্লির এক বাঙালি অধ্যাপিকার সঙ্গে আলাপের সময় দেখেছিলাম যে তিনি এই জেনেই উল্লসিত যে তাঁর মত আমিও যাদবপুরে পড়েছি, তিনি যাদবপুরিয়ান বলে একটি কথাও ব্যবহার করলেন। তিনি জানেন না যে বাংলায় পুরিয়া শব্দটা একটা স্ল্যাং! এবং মজার ব্যাপার হল একজন স্বজাতীয়র সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি একটি বাংলা কথাও ব্যবহার করলেন না, সমস্ত কথা চালালেন ইংরেজিতে, যদিও আমি বাংলাতেই বলছিলাম), বা সে বিলেত-অ্যামেরিকার অমুক কলেজের প্রাক্তনী, সে অমুককে তার গডফাদার মেনেছে এবং সে তমুক গোষ্ঠীতে নাম লিখিয়েছে। কলকাতায় আমার পড়াশোনার সময় দেখেছি, কোনও না কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির নেকনজরে না পড়লে সেখানে অ্যাকাডেমিক্সে বা মিডিয়াতে ঢোকাই যায় না। বাংলায় এখনও জমিদারিপ্রথা চলছে, গোষ্ঠীপ্রথা চলছে। আমাদের কিংবদন্তিসম ব্যক্তিত্বরা সবাই এই জমিদারিপ্রথাকে লালন করেছেন, সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে। সিপিএম এসে এই জিনিসটাকেই প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দিয়েছে আর কি। পুঁজিবাদের প্রয়াসই থাকে এরকম সামন্তধর্মী নেক্সাস বজায় রাখা, কারণ পুঁজি তো মানুষে মানুষে টাকা ছাড়া অন্য সম্পর্ক স্বীকার করে না, অথচ তাতে কাজ চালানো অসম্ভব, তাই পুরোনো সমাজের থেকে এই বদ সম্পর্কগুলো (পেট্রিয়ার্কি ও ফ্যামিলি সহ) সে ধার নেয়। এটা বিখ্যাত মার্ক্সিয় ঐতিহাসিক এরিক হবসবমের মত। আর বাংলায় এত গোষ্ঠীর, জমিদারের, সমাজপতির, মোড়লের ছড়াছড়ির কারণ কি, সে প্রসঙ্গে আমার মনে হয় আমাদের অতি-উর্বরা, বহুফসলা, সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা resourceful মাতৃভুমির জলহাওয়া এর জন্য ঐতিহাসিকভাবে দায়ী হতে পারে।
মার্ক্সিয় চিন্তায় ধর্ম নিয়ে সেই এঙ্গেলস থেকে আজকের টেরি ইগলটন পর্যন্ত যে কাজ হয়েছে, আমি চাই হিন্দু বাঙালির ওপরে সেই চিন্তার প্রয়োগ ঘটিয়ে একটি সুসংহত কাজ হোক, যাতে অনেকগুলি বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা যাবে। আমরা, পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ বাসিন্দা যে জন্মসূত্রে হিন্দু বাঙালি সেটা লুকোছাপা করার চেষ্টা হাস্যকর, তাকে ট্যাবু বানিয়ে তোলা এবং তার উল্লেখ নিষিদ্ধ করা এবং তা নিয়ে এক ফ্রয়েডিয় অস্বস্তিতে ভোগা আমাদের শিক্ষিত বাম-লিবেরাল অংশটির এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর ফলে এক ভয়াবহ গ্যাপ তৈরি হয়েছে, বাকি বাঙালির সঙ্গে এই অংশটির। এরা বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না বা বাবা তারকনাথ জাতীয় বাংলা ছবি কেন রইরই করে চলে সেটা ভেবে অবাক হয়ে যান। দমদমে যখন বিজেপি জেতে, তখনও এই বুর্জোয়া লিবেরাল বামপন্থিরা অবাক হয়ে যান। সাধে কি আর নরেন্দ্রনাথ দত্তর পিতাঠাকুর তাঁকে বলেছিলেন, বড় হয়ে আর যা-ই হোস না কেন বাবা, অবাক হোস না।
আলোচনার এই অংশের শুরুতে ব্রিটিশ সমালোচক টেরি ইগলটনের যে বক্তব্যটি উদ্ধৃত করেছি, সেখানে ইগলটন ধর্মের সামাজিক-রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে কিছু বলেননি, যদিও অন্যত্র এ বিষয়ে প্রচুর লেখালেখি করেছেন। মানুষ সামাজিক সঙ্ঘবদ্ধ প্রাণী, অ্যা্রিস্টোটল বলেছিলেন political animal। একতাবদ্ধ হওয়ার একটি সুত্র চাই। আধুনিককালে যেকোনও পোস্ট-এনলাইটেনমেন্ট সমাজে সেই সূত্রটি যোগায় ভাষা ও সংস্কৃতি। ভাষা যে শুধু দুটো একটা কবিতা গল্প লেখার জন্য নয়, ভাষা যে আমাদের মস্তিষ্কের নিয়ামক, আমাদের চিন্তার নিয়ন্ত্রক, তা যে এমন এক বিশাল মহাবিশ্ব যার ওপারে যাওয়ার ক্ষমতা মানুষের কখনও হয়ই না, এগুলো বিংশ শতাব্দির সমস্ত দর্শন স্বীকার করেছে, Saussure থেকে Lacan সবাই তা মেনেছেন। অবশ্য যে সমাজে এনলাইমেন্ট ঘটেনি, সেখানে ধর্মই সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার প্রধান মিডিয়াম হয়ে থেকে যায়, যেমন গোঁড়া মুসলিম দেশগুলি। এইজন্য ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদ গত প্রায় একশো বছর ধরে মানুষের মধ্যে এক কাল্পনিক কমিউনিটি (বেনেডিক্ট অ্যান্ডারসনের কথায়)বানিয়ে তোলে। কাল্পনিক, কারন পাঠক, আপনি ও আমি এক যোগসূত্র কল্পনা করছি। মনে করছি, কোনও একটি কারণে আপনার ও আমার মধ্যে বেরাদরি স্থাপিত হয়েছে। সেটা আমাদের বিরাট মানবিক প্রাপ্তি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ শুধু বাংলা ভাষা সংস্কৃতিকে এই হিন্দি ইংরেজির রাজত্বে রক্ষা করার জন্য নয়, তা শুধু গ্লোবালাইজ়েশনের যুগে মৃত্তিকা থেকে উঠে আসা প্রতিরোধ নয়, তা আমাদের মধ্যে এক কমিউনিটির জন্ম দেয়। তা অসংখ্য নিম্নবর্গীয় বাঙালির ক্ষমতায়ণের লক্ষ্যে এক সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, তাই মার্ক্সিয় চিন্তায় অপরিহার্য। বাঙালি জাতীয়তাবাদ ব্যক্তি বাঙালির alienation ঘোচায়। তা আমাদের ইতিহাসের শিহরণ, তা আমাদের পরিচয়ের উল্লাস। এ মাতৃদুগ্ধের মত, তাই কোনও বিকল্প হয় না।
এই লেখাটি এখানেই শেষ হচ্ছে, তবে আলোচনা শেষ নয়। সবে শুরু।
As industrialism gradually undermined religious values, along with their ideological power, it proved necessary to find a substitute for this most astonishingly successful of all symbolic systems; and from the Romantics onwards, it was known as culture. Most aesthetic concepts are theological ideas in disguise. Hence the religious, pseudo-transcendent language in which art has so often been discussed in these distinctly non-transcendent modern times.
Terry Eagleton , The New Statesman, 20 June 2005
পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি জাতীয়তাবাদের raison d'etre কিন্তু আমি এখনও দেখাইনি। ওটা সাসপেন্স ভেবে নিন, যাতে পাঠক লেখার শেষ পর্যন্ত পড়তে বাধ্য হন। এও ভাবতে পারেন যে অনেকগুলি কথা আগে না বললে ও কথায় পৌঁছনো যাবে না। সলতে পাকানো এখনও শেষ হয়নি তো।
বাঙালি বর্ণহিন্দু দুয়েকবার মোঘল-পাঠানের সঙ্গে টক্কর দিলেও মোটের ওপর অনুগত ছিল। এরপর বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজকে সরিয়ে ইংরেজের ক্ষমতায় আসায় বাঙালি বর্ণহিন্দুদের সমাজপতিরা সক্রিয় সমর্থন দেন। এই সময় থেকে পাশ্চাত্যের সঙ্গে আমাদের নৈকট্যের ন্যারেটিভ শুরু। মনে রাখা দরকার যে সিপাহী বিদ্রোহের সময় বিদ্রোহী সেপাইরা ইংরেজ প্যাঁদানোর পরেই বাঙালি প্যাঁদাতেন। উকিল, ডাক্তার, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, শিক্ষক ইত্যাদি সমস্ত পদই বাঙালি বর্ণহিন্দুরা অলঙ্কৃত করে অত্যন্ত সফলভাবে ব্রিটিশদের প্রিয় comprador শ্রেণি হিসেবে উঠে আসে। কিন্তু সিপাহী বিদ্রোহের মাত্র ত্রিশ চল্লিশ বছরের মধ্যেই এই অবস্থার এক আমূল পরিবর্তন ঘটে। কেন ও কিভাবে ঘটে, তা একটা লম্বা গল্প, তবে সংক্ষেপে বললে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ। পাশ্চাত্য শিক্ষা চালু করা হবে, অথচ তার শ্রেষ্ঠ দার্শনিক চিন্তাগুলি থেকে বাঙালি হিন্দু গা বাঁচিয়ে চলবে, এমনটা ভাবা মূর্খামি। তাই স্বরাজের স্পৃহা, আধুনিক জাতীয়তাবাদ, সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতার আদর্শ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নির্ভর ভাষা চেতনা, এমনকি সাংস্কৃতিক প্রতিরোধে ধর্মের পুনর্জাগরণ (রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ) ইত্যাদি বিষয়গুলো অনেকটাই পাশ্চাত্যের সংস্পর্শে এসে তৈরি হওয়া ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। এর আগে আমাদের যে ধর্মীয় রিফর্মেশন আন্দোলন হয়, ব্রাহ্ম আন্দোলন, তা ছিল মূলত ইংরেজ ঘনিষ্ঠ বাঙালি বর্ণহিন্দুর প্রচেষ্টা। তবে সেই কারণে তাকে খাটো করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তাদের সম্পর্কে একথাও বলতে হয় যে শিক্ষিত হিন্দু বাঙালি যুবকদের ক্রিশ্চান হয়ে যাওয়ার প্রবণতা তারা সফলভাবে রোধ করেছিলেন।
এই প্রসঙ্গে না বলে পারছি না যে তথাকথিত ভারতীয় জাতীয়তাবাদ আসলে যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপরে কিঞ্চিত কসমেটিক সার্জারি ঘটিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিল, আমাদের উদারপন্থি ভারতীয়তাবাদি লোকগুলি তা বেমালুম চেপে যান, বা হয়ত খবরই রাখেন না।
একবার দেখেছিলাম রবীন্দ্রনাথের বাংলার মাটি বাংলার জলের বিকৃত হিন্দি অনুবাদ দেখানো হচ্ছে দূরদর্শনের ন্যাশনাল নেটওয়ার্কে , দেশ কি মিট্টি দেশ কি জল! ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশনের বহরটা ভাবুন একবার! এটা ইতিহাসের যে কোনও ছাত্রের কাছে অজানা নয় যে বঙ্কিমের বঙ্গমাতাকেই ভারতমাতা বলে বাজারে ছাড়া হয়েছিল, আর বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ব্যবহৃত স্লোগান বন্দেমাতরম ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের স্লোগান হয়ে ওঠে। স্বদেশি কথাটাই তো বাঙালি জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি। তা একসময় ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াইতে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রয়োজন হয়েছিল যখন, তখন উত্তর ও দক্ষিণ ভারতীয়রা বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে ধার নিয়েছেন, বেশ করেছেন। কিন্তু আজ যদি সেই ভারতীয় জাতীয়তার দোহাই দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়, তা ইতিহাসবিরুদ্ধ, এবং তা মোটেই সহ্য করা যায় না।
মজার ব্যাপার হচ্ছে যে যতদিন বাঙালি বর্ণহিন্দু দালালি করেছেন, ততদিন সব ঠিকঠাক চলেছিল। যেই ইংরেজের বিরুদ্ধে গেলাম, সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি মুসলিম ও বাঙালি দলিতদের প্রতি ইংরেজের উস্কানি শুরু হল। বর্ণহিন্দুর দোষ অসীম, কোনও সন্দেহ নেই। একচক্ষু হরিণ। শুধু ইংরেজের আধিপত্যই দেখেছি, নিজের বাঁদরামি দেখিনি, ঘরের কাছে প্রতিবেশি নিম্নবর্ণ কিভাবে বেঁচে আছে, কেয়ার করিনি (রবীন্দ্রনাথের সতর্কবাণী মনে পড়ে)। তাই বর্নহিন্দুর নেতৃত্বে যে স্বাধীনতা সংগ্রাম, তার শেষে দেশভাগই হওয়ার ছিল। ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টিকে কংগ্রেসের সমর্থন না দেওয়া ছিল ইতিহাসের অমোঘ ইঙ্গিত। এরপর বাংলায় মুসলিম লিগের রাজত্ব, বাঙালি হিন্দুদের ওপরে নোয়াখালির মত কুৎসিত জেনোসাইড, এস সি ফেডারেশনের সমর্থনে বাংলাভাগ, যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের পাকিস্তানের আইনমন্ত্রীর পদগ্রহণ ও এরপর তাঁর ট্র্যাজিক জীবন, পূর্ব পাকিস্তান থেকে কয়েক বছরের মধ্যে চার মিলিয়ন হিন্দুর (যার অধিকাংশই নিম্নবর্গীয়, যারা দেশভাগের সময় পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিলেন) উৎখাত হওয়া, এ সবই আমাদের ইতিহাসে থেকে যাবে। উদবাস্তু বাঙালি নমশূদ্রকে কিভাবে জ্যোতির বসুর পার্টি ও পুলিস মরিচঝাঁপিতে গণখুন করেছে, সেটাও দেখতে হবে। ইতিহাসকে কম্বলচাপা না দিয়ে ফিরে পড়ার সৎসাহস দেখানো দরকার।
ভারত একটি বহুজাতিক দেশ। এখানে প্রতিটি জাতিই সেকথা জানে ও বোঝে। শুধু বাম-লিবেরাল বিশ্বমানবিকরা বোঝেন না। দিল্লিতে নিজের প্রদেশের স্বার্থরক্ষা সবাই করেন, শুধু বাঙালি এইসব তুচ্ছ ব্যাপারে মাথা ঘামান না। সবাই নিজের প্রদেশের কর্মপ্রার্থিকে অগ্রাধিকার দেন, শুধু বাঙালিই দেন না। ফলে ভারতে বাঙালির কোনঠাসা হওয়ার এক চমৎকার পরিবেশ বাঙালিই তৈরি করে দেন। একসময় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালিরাই চালাতেন, আজ সেখানে বাঙালির দশা দেখলে সেই টেনিদার কথাটা মনে পড়ে, বাঙালি পাগল না বাঙালির পেট খারাপ বোঝা সত্যি খুব কঠিন।
কিছুদিন আগে, সম্ভবত এ বছরের (২০১০) মার্চ মাসে আনন্দবাজার পত্রিকায় দিল্লিতে বাংলা চর্চার বেহাল দশা নিয়ে একটি প্রতিবেদন বের হয়েছিল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স করার ব্যবস্থা আছে, কিন্তু যেহেতু বাংলা নিয়ে পড়লে প্রায় কোনও ভবিষ্যতই নেই, তাই ছাত্ররা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। প্রবাসী বাঙালিদেরও বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই, এমনকি যে বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলি রয়েছে, তারাও ধুঁকছে। এ জিনিস তামিলদের ব্যাপারে ভাবা যায় না, স্রেফ ভাবা যায় না। হিন্দু বাঙালির পরিচয় সঙ্কটের কারণে, তার উদারতা, বিশ্বজনীনতা ও বামপন্থার কারণে যদি ভারতে বাংলা ভাষা সংস্কৃতির বিসর্জন যাত্রা ঘটে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে, সেক্ষেত্রে আস্তিন গোটানোর সময় এসেছে।
আমাদের এক ফেসবুক বন্ধু, যিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রয়োজনীয়তাই অস্বীকার করেছেন, তিনি আরও একটি মন্তব্য করেনঃ যে বাঙালিরা নিজ ক্ষেত্রে ব্যর্থ তারাই বাকি বাঙালিদের কাছে জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে নিজেদের বাঁচাতে চান, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চান। অর্থাৎ বাঙালি জাতীয়তাবাদ হল অক্ষমের বৃহন্নলা ক্রন্দন। যেহেতু এই মন্তব্য আমার বাঙালি জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত একটি স্টেটাস মেসেজের প্রেক্ষিতে এসেছিল, সন্দেহ হয় তিনি আমাকেই একজন ব্যর্থ বাঙালি ঠাউরেছেন এবং মনে করেছেন যে আমার বোধহয় নিতান্ত ল্যাজেগোবরে অবস্থা, তাই আমি বাকি বাঙালিদের উদ্দেশ্যে আকুল ক্রন্দন করছি, ওগো, আমাকে সাহায্য কর, বাঙালি বাঙালিকে না দেখিলে কে দেখিবে। যেন এমন করলে সেটা অপরাধ হত! এই মন্তব্য হেসে ওড়াবেন না, এই মন্তব্য এক গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। এর মাধ্যমে বিশেষ করে দক্ষিনবঙ্গের, কলকাতা কেন্দ্রিক বাঙালির এক মারাত্মক অসুখ ধরা পড়ে, সে অসুখের নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত বাঙালি জাতীয়তাবাদ পশ্চিমবঙ্গে দাঁড়াতেই পারবে না। কলকাতার বাঙালি ক্ষমতার আরাধনায় (মিশেল ফুকোর পাওয়ার/নলেজ বিন্যাস এখানে খুব জরুরি ধারণা যদি প্রোফেশনাল মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবনধারণ বুঝতে চান) বহু আগে সমব্যথা বিসর্জন দিয়েছে। যদি কোনও দুস্থ বিহারি/তামিল তার জাতের কোনও ক্ষমতাবান ব্যক্তির কাছে সাহায্য চান, তিনি সেটা পাবেন এই সম্ভাবনা নব্বই শতাংশ। যদি কোনও বিপন্ন বাঙালি যুবক বা যুবতী কোনও বয়স্ক বাঙালির কাছে সাহায্য চান, কিছু মুফত জ্ঞান ছাড়া উপহাস পাবেন, কিন্তু কোনও সাহায্য পাবেন না, সে সম্ভাবনা নিরানব্বই দশমিক নয় নয় শতাংশ। আমরা মানুষ চিনি তার প্রতিষ্ঠা দিয়ে, এবং প্রতিষ্ঠা মানে অবশ্যই চাকরি, এবং প্রতিষ্ঠা মানে সংগ্রামরত মানুষ নয়, ক্ষমতার দালালি করে জুড়িগাড়ি হাঁকানো মানুষ। এবং যেহেতু বাঙালি আর্থিক দিক দিয়ে পরনির্ভর, পরজীবি, সে অন্যের প্রতিষ্ঠানে ভৃত্যের কাজ করে, তাই সে প্রতিষ্ঠা নিয়ে ম্যানিয়ায় ভোগে। সে ব্যর্থ মানুষের প্রতি সমব্যথা দেখায় না, আর দালালের স্বাজাত্যবোধ থাকলে তো সূর্য পশ্চিমে উঠবে। বাঙালির হিন্দি ইংরেজির প্রতি মুক্তকচ্ছ হওয়ার প্রধান কারণও এই, এ দুটি জানলে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়, সে বুঝেছে। বাংলা ক্ষমতার ভাষা নয়, কাজেই সেটা শেখার কি প্রয়োজন!
যতক্ষণ তুমি ব্যর্থ, তুমি মানুষই নও। যেই তুমি বড়রকম সাফল্য পেলে, তুমি আগমার্কা আনন্দবাজার ছাপের সেরা বাঙালি, সে তুমি বাংলা ও বাঙালি সম্পর্কে ছাই জানো আর না জানো! হীরক রাজার দেশে একটা ডায়ালগ ছিল, 'নাম জানো না তো! যার নাম নাই, তার কথার দাম নাই!' বাঙালির সাফল্য ম্যানিয়া, তার সুপারম্যানিয়া (শিব্রাম মস্কো বনাম পন্ডিচেরিতে এই শব্দ কয়েন করেছিলেন, সুপারম্যান নিয়ে বাঙালির যে বিশেষ ম্যানিয়া তাকে ব্যাখ্যা করতে গেলে এই শব্দটি ধার না করে পারা যায় না), বাম-লিবেরালের সুখী complacent বালিগঞ্জ যোধপুর সল্টলেক নিউ টাউন কেন্দ্রিক জীবনচর্চা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পথে প্রধান বাধা। সংগ্রামরত বাঙালি, বিপন্ন বাঙালি, বেকায়দায় পড়া বাঙালির জন্য সমবেদনা না দেখিয়ে, তাকে উৎসাহ না দিয়ে, সাহায্য না করে কেবল তেলা মাথায় তেল দেওয়া নামক যে মহামারী আমাদের সমস্ত ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার মূলে আক্রমণ করছে, তাকে চরম জোরে লাথিয়ে গঙ্গাপার না করালে আমাদের বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাস্তবে পরিণত হবে। এ মহামারীর মূলে আছে মুৎসুদ্দিপনা, সেটা মনে রেখে লাথিটা মারতে হবে।
উল্লেখ করা ভাল, বাঙালি জাতীয়তাবাদের ফলে বাকি ভারতবাসি বা বিশ্ববাসির সঙ্গে কোনও বিভেদ আসার কথা নয়, কারণ একজন ভাল বাঙালি সঙ্গী হিসেবে খুব আকর্ষণীয়, সেটা আপনাকে অন্যভাষীরাই বলে দেবেন। আর পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি জাতীয়তাবাদ এই শিরোনাম নিয়ে একটু বলে রাখি, আমি চাই ভারত রাষ্ট্রে বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাঙালিরা যেন পশ্চিমবঙ্গকে তাদের স্বার্থরক্ষকের ভূমিকায় দেখেন, সমদরদীর ভুমিকায় দেখেন। যিনি এই লেখার শেষ অবধি পড়বেন, তিনি নিশ্চয়ই ভাববেন না যে আমি বহির্বঙ্গের বাঙালিকে চাপা দিয়ে স্রেফ এক কলকাতা কেন্দ্রিক বাঙালিয়ানায় আস্থা রাখি। তবে পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতা আমাদের পীঠস্থান, তার প্রতি কোনও বিদ্বেষ রাখা অনুচিত, বরং সেখানে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন কিভাবে আনা যায়, সেই চেষ্টাই করা ভাল। এও বলি, বাঙালিয়ানার, বাঙালি সংস্কৃতির বিকেন্দ্রীকরণ যে দরকার, সেটা প্রবাসী বাঙালি হয়ে আমি অবশ্যই হাড়ে হাড়ে বুঝি।
কিন্তু বাঙালির ইতিহাস এও সাক্ষ্য দেয়, যে কোনও বিষয়ে আমাদের একমত হওয়া বড় মুশকিল। আমাদের সব বিষয়ে দলাদলি, যার জন্যই আক্ষরিক অর্থে কোনও দলই গড়ে ওঠেনি। বাঙালি জাতীয়তাবাদের এই প্রায়োগিক সমস্যার কোনও সহজ সমাধান হবে না। একটু ইতিহাস ঘেঁটে যদি দেখি, এই কাঁকড়াবৃত্তির কারন খুঁজি, এর সূত্রপাত সেন আমলে। আমাদের সমাজকে বহুভাগে বিভক্ত করে সেনদের বোধকরি শাসনে সুবিধাই হয়েছিল। জমিদারিপ্রথা এল মধ্যযুগে। জাতপাত ও জমিদারিপ্রথার ফলে এই সর্বনাশ ঘটল যে আমাদের সংগঠিত হওয়ার প্যারামিটারগুলি খুবই ক্ষুদ্র থেকে গেল। এবং এই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।
বাঙালি যে স্বপরিচয় নিয়ে স্বস্তিবোধ করে না, তার একটা বড় কারণ সে অন্য উপপরিচয়ে জীবনধারণ করে থাকে। সে অমুকের ঘনিষ্ঠ, সে তমুকের বংশধর, সে অমুক পদবীভূক্ত কুলীন বামুন বা কায়েত, সে সাউথ পয়েন্ট বা ডন বস্কো বা প্রেসিডেন্সি বা সেইন্ট জ়েভিয়ার্সে পড়েছে (আমি দিল্লির এক বাঙালি অধ্যাপিকার সঙ্গে আলাপের সময় দেখেছিলাম যে তিনি এই জেনেই উল্লসিত যে তাঁর মত আমিও যাদবপুরে পড়েছি, তিনি যাদবপুরিয়ান বলে একটি কথাও ব্যবহার করলেন। তিনি জানেন না যে বাংলায় পুরিয়া শব্দটা একটা স্ল্যাং! এবং মজার ব্যাপার হল একজন স্বজাতীয়র সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি একটি বাংলা কথাও ব্যবহার করলেন না, সমস্ত কথা চালালেন ইংরেজিতে, যদিও আমি বাংলাতেই বলছিলাম), বা সে বিলেত-অ্যামেরিকার অমুক কলেজের প্রাক্তনী, সে অমুককে তার গডফাদার মেনেছে এবং সে তমুক গোষ্ঠীতে নাম লিখিয়েছে। কলকাতায় আমার পড়াশোনার সময় দেখেছি, কোনও না কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির নেকনজরে না পড়লে সেখানে অ্যাকাডেমিক্সে বা মিডিয়াতে ঢোকাই যায় না। বাংলায় এখনও জমিদারিপ্রথা চলছে, গোষ্ঠীপ্রথা চলছে। আমাদের কিংবদন্তিসম ব্যক্তিত্বরা সবাই এই জমিদারিপ্রথাকে লালন করেছেন, সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে। সিপিএম এসে এই জিনিসটাকেই প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দিয়েছে আর কি। পুঁজিবাদের প্রয়াসই থাকে এরকম সামন্তধর্মী নেক্সাস বজায় রাখা, কারণ পুঁজি তো মানুষে মানুষে টাকা ছাড়া অন্য সম্পর্ক স্বীকার করে না, অথচ তাতে কাজ চালানো অসম্ভব, তাই পুরোনো সমাজের থেকে এই বদ সম্পর্কগুলো (পেট্রিয়ার্কি ও ফ্যামিলি সহ) সে ধার নেয়। এটা বিখ্যাত মার্ক্সিয় ঐতিহাসিক এরিক হবসবমের মত। আর বাংলায় এত গোষ্ঠীর, জমিদারের, সমাজপতির, মোড়লের ছড়াছড়ির কারণ কি, সে প্রসঙ্গে আমার মনে হয় আমাদের অতি-উর্বরা, বহুফসলা, সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা resourceful মাতৃভুমির জলহাওয়া এর জন্য ঐতিহাসিকভাবে দায়ী হতে পারে।
মার্ক্সিয় চিন্তায় ধর্ম নিয়ে সেই এঙ্গেলস থেকে আজকের টেরি ইগলটন পর্যন্ত যে কাজ হয়েছে, আমি চাই হিন্দু বাঙালির ওপরে সেই চিন্তার প্রয়োগ ঘটিয়ে একটি সুসংহত কাজ হোক, যাতে অনেকগুলি বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা যাবে। আমরা, পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ বাসিন্দা যে জন্মসূত্রে হিন্দু বাঙালি সেটা লুকোছাপা করার চেষ্টা হাস্যকর, তাকে ট্যাবু বানিয়ে তোলা এবং তার উল্লেখ নিষিদ্ধ করা এবং তা নিয়ে এক ফ্রয়েডিয় অস্বস্তিতে ভোগা আমাদের শিক্ষিত বাম-লিবেরাল অংশটির এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর ফলে এক ভয়াবহ গ্যাপ তৈরি হয়েছে, বাকি বাঙালির সঙ্গে এই অংশটির। এরা বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না বা বাবা তারকনাথ জাতীয় বাংলা ছবি কেন রইরই করে চলে সেটা ভেবে অবাক হয়ে যান। দমদমে যখন বিজেপি জেতে, তখনও এই বুর্জোয়া লিবেরাল বামপন্থিরা অবাক হয়ে যান। সাধে কি আর নরেন্দ্রনাথ দত্তর পিতাঠাকুর তাঁকে বলেছিলেন, বড় হয়ে আর যা-ই হোস না কেন বাবা, অবাক হোস না।
আলোচনার এই অংশের শুরুতে ব্রিটিশ সমালোচক টেরি ইগলটনের যে বক্তব্যটি উদ্ধৃত করেছি, সেখানে ইগলটন ধর্মের সামাজিক-রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে কিছু বলেননি, যদিও অন্যত্র এ বিষয়ে প্রচুর লেখালেখি করেছেন। মানুষ সামাজিক সঙ্ঘবদ্ধ প্রাণী, অ্যা্রিস্টোটল বলেছিলেন political animal। একতাবদ্ধ হওয়ার একটি সুত্র চাই। আধুনিককালে যেকোনও পোস্ট-এনলাইটেনমেন্ট সমাজে সেই সূত্রটি যোগায় ভাষা ও সংস্কৃতি। ভাষা যে শুধু দুটো একটা কবিতা গল্প লেখার জন্য নয়, ভাষা যে আমাদের মস্তিষ্কের নিয়ামক, আমাদের চিন্তার নিয়ন্ত্রক, তা যে এমন এক বিশাল মহাবিশ্ব যার ওপারে যাওয়ার ক্ষমতা মানুষের কখনও হয়ই না, এগুলো বিংশ শতাব্দির সমস্ত দর্শন স্বীকার করেছে, Saussure থেকে Lacan সবাই তা মেনেছেন। অবশ্য যে সমাজে এনলাইমেন্ট ঘটেনি, সেখানে ধর্মই সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার প্রধান মিডিয়াম হয়ে থেকে যায়, যেমন গোঁড়া মুসলিম দেশগুলি। এইজন্য ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদ গত প্রায় একশো বছর ধরে মানুষের মধ্যে এক কাল্পনিক কমিউনিটি (বেনেডিক্ট অ্যান্ডারসনের কথায়)বানিয়ে তোলে। কাল্পনিক, কারন পাঠক, আপনি ও আমি এক যোগসূত্র কল্পনা করছি। মনে করছি, কোনও একটি কারণে আপনার ও আমার মধ্যে বেরাদরি স্থাপিত হয়েছে। সেটা আমাদের বিরাট মানবিক প্রাপ্তি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ শুধু বাংলা ভাষা সংস্কৃতিকে এই হিন্দি ইংরেজির রাজত্বে রক্ষা করার জন্য নয়, তা শুধু গ্লোবালাইজ়েশনের যুগে মৃত্তিকা থেকে উঠে আসা প্রতিরোধ নয়, তা আমাদের মধ্যে এক কমিউনিটির জন্ম দেয়। তা অসংখ্য নিম্নবর্গীয় বাঙালির ক্ষমতায়ণের লক্ষ্যে এক সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, তাই মার্ক্সিয় চিন্তায় অপরিহার্য। বাঙালি জাতীয়তাবাদ ব্যক্তি বাঙালির alienation ঘোচায়। তা আমাদের ইতিহাসের শিহরণ, তা আমাদের পরিচয়ের উল্লাস। এ মাতৃদুগ্ধের মত, তাই কোনও বিকল্প হয় না।
এই লেখাটি এখানেই শেষ হচ্ছে, তবে আলোচনা শেষ নয়। সবে শুরু।
Subscribe to:
Posts (Atom)